উত্তরমালা
ক বিভাগ – গদ্য
১. কন্যার বাপ সবুর করিতে পারিতেন, কিন্তু বরের বাপ সবুর করিতে চাহিলেন না। তিনি দেখিলেন, মেয়েটির বিবাহের বয়স পার হইয়া গিয়াছে, কিন্তু আর কিছুদিন গেলে সেটাকে ভদ্র বা অভদ্র কোন রকমের চাপা দিবার সময়টায়ও পার হইয়া যাইবে। মেয়ের বয়স অবৈধ রকমে বাড়িয়া গিয়াছে বটে, কিন্তু পণের টাকার আপেক্ষিক গুরুত্ব এখনো তাহার চেয়ে কিঞ্চৎ উপরে আছে, সেই জন্যি তাড়া।’’
ক. বিয়ের সময় অনুপমের বয়স কত ছিল?
খ. অন্নপূর্ণার কোলে গজাননের ছোট ভাইটি।- উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের কন্যার বাপের সাথে ‘অপরিচিতা’ গল্পের অনুপমের মামার সাদৃশ্য দেখাও।
ঘ. উদ্দীপকের ঘটনাচিত্র ‘অপরিচিতা’ গল্পের খন্ডাংশের প্রতিনিধিত্ব করে। মাত্র কথাটির যথার্থতা বিশ্লেষণ কর।
১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বিয়ের সময় অনুপমের বয়স ছিল তেইশ বছর।
খ. ‘অন্নপূর্ণার কোলে গজাননের ছোট ভাইটি’- কথাটি মূলত অনুপমেকে ব্যঙ্গ করার উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে। ‘অপরিচিতা’ গল্পে লেখক অন্নপূর্ণার সন্তানের সঙ্গে গল্পের অনুপমের তুলনা করেছেন। দেবী দুর্গার দুই পুত্র গণেশ ও কার্তিকেয়। কার্তিকেয় ছোট বিধায় সে সব সময় মাতৃস্নেহে লালিত এবং মায়ের কোলেই যেন তার একমাত্র আশ্রয়। অনুপম শিক্ষিত হলেও ব্যক্তিত্বরহিত পরিবারতন্ত্রের কাছে অসহায়। তার নিজস্বতা কিছুই নেই। তাকে দেখলে মনে হয় সে যেন মায়ের কোলসংলগ্ন অবুঝ শিশু। এই কারণে লেখক ব্যঙ্গার্থে অনুপমকে কার্তিকেয়ার সঙ্গে তুলনা করে প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছেন।
গ. উদ্দীপকের কন্যার বাপের সঙ্গে ‘অপরিচিতা’ গল্পের অনুপমের মামার সাদৃশ্য রয়েছে।
আমাদের সমাজে বিরাজমান কিছু কুসংস্কারের কারণে মেয়েদের জীবনে দুর্ভোগ নেমে আসে। মেয়ের বিয়ের বয়স পার হয়ে যাওয়া এবং যৌতুকের চিন্তায় মেয়ের বাবা-মাও উদ্বিগ্ন থাকেন। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যাচ্ছে এসব সংস্কার। উদ্দীপকে কন্যার বিয়ের বয়স পার হয়ে গেলেও তার বাবার তেমন আগ্রহ ছিল না। মেয়ের বিয়ের ব্যাপারে তার মধ্যে কোনো তাড়াহুড়ো পরিলক্ষিত হয়নি। ‘অপরিচিতা’ ফল্পে মামা ছিল অনুপমের অভিভাবক। কিন্তু অনুপমের বিয়ের বয়স হয়ে যাওয়ার পরও তার মামার এ বিষয়ে তেমন আগ্রহ ছিল না। হরিশের কথায় অনুপমের বিয়ের বিষয়ে অগ্রসর হলেও মামার মধ্যে তেমন একটা তাড়াহুড়ো ছিল না। এ কারণে অনেক বড় ঘর থেকে সস্বন্ধ আসার পরও মামা অনুপমের বিয়ের ব্যাপারে সময় নিয়েছে। আলোচিত এ দিকটির কারণেই উদ্দীপকের কন্যার বাপের সঙ্গে ‘অপরিচিতা’ গল্পের অনুপমের মামার সাদৃশ্য দেখা যায়।
ঘ. উদ্দীপকের ঘটনাচিত্র ‘অপরিচিতা’ গল্পের খন্ডাংশের প্রতিনিধিত্ব করে মাত্র- কথাটি যথার্থ।
দীর্ঘকাল থেকে আমাদের সমাজে যৌতুকপ্রথা বিদ্যমান। এ যৌতুকপ্রথা কারণে সবচেয়ে বেশি হেয় হচ্ছে আমাদের সমাজের নারীরা। তবে বর্তমানে শিক্ষাব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতির ফলে যৌতুকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে উঠেছে। বিয়ে নিয়ে সমাজে মেয়েদের অবস্তা উদ্দীপকের ঘটনাচিত্রে প্রতিফলিত হয়েছে। বিয়ের বিষয়ে মেয়েদের বয়সের ব্যাপারটিও এখানে স্থান পেয়েছে। কন্যার বিয়ের বয়স পার হয়ে যাওয়ার পণের টাকার গুরুত্বও বেড়েছে। বরপক্ষের যৌতুকের বিষয়ে লোভী দৃষ্টিভঙ্গিও উদ্দীপকে প্রকাশ পেয়েছে। ‘অপরিচিতা’ গল্পের আমাদের সমসজে বিবাহযোগ্য মেয়েদের অবস্থা এবং অমানবিক যৌতুকপ্রথার বিরুদ্ধে নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রতিরোধের কথা বলা হয়েছে। কল্যাণীর পনেরো বছর বয়স বরপক্ষের কাছে অনেক বেশি মনে হয়েছে। অনুপমের মামার যৌতুকের প্রতি লোভের দিকটিও ফুটে উঠেছে। কল্যাণীর বাবা বরপক্ষের দাবি পূরণ করতে রাজি হন। কিন্তু বরপক্ষ যখন সেকরা নিয়ে এসে কন্যার গহনা যাচাই করতে চায় তখন কল্যাণীর বাবা সেখানে মেয়ের বিয়ে দিতে অসম্মতি জানান। শম্ভুনাথ বাবুর এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে মেয়ে কল্যাণীও সাড়া দেয় এবং দেশপ্রেমে উদদ্ধ হয়ে সারা জীবন মেয়েদের শিক্ষায় নিজেকে নিয়োজিত রাখার ব্রত গ্রহন করে।
‘অপরিচিতা’ গল্প এবং উদ্দীপক উভয় স্থানেই যৌতুকপ্রথা এবং কন্যাদায়গ্রস্ত পিতার বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে। কিন্তু ‘অপরিচিতা’ গল্পে ওই বিষয় ছাড়াও অমানবিক যৌতুকপ্রথার বিরুদ্ধে কন্যার পিতার অবস্থান, বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ার পর কল্যাণীর বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত, মেয়েদের শিক্ষাদানের ব্রত গ্রহন ইত্যাদি বিষয়ের প্রতিফলিত রয়েছে, যেগুলো উদ্দীপকে অনুপস্থিত। তাই বলা যায় যে, উদ্দীপকটি ‘অপরিচিতা’ গল্পের একটি খন্ডাংশের প্রতিনিধিত্ব করে কথাটি যথার্থ।
২.যাকে অপদার্থ, অকর্মণ্য বলে উপহাস করা হচ্ছে, তাকে যদি কেউ সাহস দেয়, এগিয়ে যাবার পরামর্শ এবং সহযোগিতার হাত বাড়ায়, তবে সেই মানুষটির মানসিক ও আত্নিক বিবর্তন ঘটবে। এতে অলস পরিশ্রমী হতে পারে, অপ্রতিভ সপ্রতিভ হবে, ভীরু সাহসী হবে, মূর্খ বিদ্বান হবে, দুর্বল বলবান হতে পারে। এর অন্যতম কারণ, সেই মানুষটির অন্তনিহিত সত্যের বিকাশ।
ক. ‘আমার পথ’ প্রবন্ধটি কোন প্রবন্ধগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে?
খ. কাজী নজরুল ইসলাম ‘আমার সত্য’ বলতে কী বুঝিয়েছেন?
গ. উদ্দীপকের ভাবনা ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের সঙ্গে কীভাবে সামসজ্ঞস্যপূর্ণ?
ঘ. ‘আত্নাকে চিনলেই আত্ননির্ভরতা আসে’’- উদ্দীপক ও ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের আলোকে মন্তব্যটি বিচার কর।
২. নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ‘আমার পথ’ প্রবন্ধকটি ‘বৃদ্ধ সকাল’ গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।
খ. কাজী নজরুল ইসলাম ‘আমার সত্য’ বলতে পরাবলম্বন ও দাসত্ব পরিহার করে নিজের আমিত্ব শক্তির দিকে ইঙ্গিত করেছেন। মানুষ তাদের আলস্য, কর্ম্বিমুখতা ও পরাবলম্বনের কারণে পিছিয়ে পড়েছে। তাদের গোলামি দাসত্বের ভাব। কিন্তু তারা যদি আপন সত্যকে জানে তাহলে তারা তাদের হারানো গৌরব ও মর্যাদা ফিরে পাবে। তাই নিজের সত্তাকে জাগিয়ে তুলতে দাসত্ব ও গোলামি দূর করতে নিজের শক্তি ও নিজের সত্যর ওপর অটুট বিশ্বাস রাখতে হবে। আর পরাধীনতা, দাসবৃত্তি থেকে মুক্ত হয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার উপায় হচ্ছে অন্তনিহিত সত্যকে অনুধাবন। ‘আমার সত্য’ বলতে লেখক এই অনুধাবন শক্তিকেই বুঝিয়েছেন।
গ. উদ্দীপকের ভাবনা আত্নশক্তিতে উদ্বুদ্ধ হওয়ার দিক দিয়ে ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের সাথে সামজ্ঞস্যপূর্ণ।
জীবনকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে হলে প্রয়োজন আত্নবিশ্বাসী ও স্বাবলম্বী হওয়া। অন্যের নির্দেশ মতো চললে স্বকীয়তা হারিয়ে যায়। নিজের সত্য শক্তিকে সঠিকভাবে জানা গেলে পৃথিবীর অন্যান্য বিষয়ও জানা যায় ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে লেখক আত্নার শক্তি ও আমিত্বশক্তিকে গুরুত্ব দিয়েছেন। পরাবলম্বন আমাদের নিস্ক্রিয় করে ফেলে। পরাবলম্বনই মানুষের সবচেয়ে বড়ো দাসত্ব। অন্তরে যাদের গোলামির ভাব বাইরের গোলামি থেকে তাদের মুক্তি নেই। আত্ননির্ভরশীল ব্যক্তি নিজের আত্নার শক্তিতে বিশ্বাসী। অন্যের শক্তিতে তার বিশ্বাস নেই। এই আত্ননির্ভরশীলতা না থাকলে মানুষ নিজের উন্নতির জন্য অন্যে ওপর নির্ভর করে। কিন্তু যেদিন মানুষের মনে আত্ননির্ভরশীলতা আসবে, যেদিন মানুষ আত্নশক্তিতে উদ্বুদ্ধ হবে সেদিন মানুষ স্বাধীন হবে। উদ্দীপকে আত্নিক বিবর্তন ও মানসিক বিকাশের মাধ্যমে আত্নশক্তিতে বলিয়ান হবার কথা বলা হয়েছে। অপদার্থ, অকর্মণ্য ব্যক্তিও অনুপ্রেরণা পেলে সপ্রতিভ হয়ে ওঠে। ‘আমার পথ’ প্রবদ্ধেও নজরুল ইসলাম ‘আমি সত্তার জাগরণের প্রত্যাশা করেছেন। নিজের চেনা, নিজের সত্যকে উপলব্ধি করার মাধ্যমে মানুষ স্বাধীনতা, মুক্তির পথে অগ্রসর হতে পারে। এ দিক থেকেই উদ্দীপকের ভাবনা ও আলোচ্য প্রবদ্ধের ভাবনা সামজ্ঞস্যমপূর্ণ।
ঘ. “আত্নাকে চিনলেই আত্ননির্ভরতা আসে”- উদ্দীপক ও ‘আমার পথ’ প্রবদ্ধের আলোকে মন্তব্যটি যথার্থ।
মানুষের জীবনে আছে অফুরন্ত আশা, আছে নিরাশার বেদনা যা তাকে যন্ত্রণায় দগ্ধ করে। পরনির্ভরতার কারণে এক অপার শূন্যতা মানুষের জীবনকে করে তুলে অর্থহীন। তবে জীবনের যে জাগ্রত অস্তিত্ব আছে, তার উপর ভিত্তি করে মানুষ নতুন আশায় উদ্দীপ্ত হয়।
উদ্দীপকে বলা হয়েছে, পরনির্ভতা কাটিয়ে কাউকে যদি তার আপন সত্য উদ্ভাসিত করা হয় তবে তার বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে। অলস হয়ে উঠবে পরিশ্রমী, ভীরু হয়ে উঠবে সাহসী, দুর্বল হয়ে উঠবে বলবান। কারণ তখন সে নিজেকে চিনবে। নিজের শক্তিতে তার অন্তনিহিত সত্যর বিকাশ ঘটবে। তখন সেই উত্তাপে পুড়বে তার পরনির্ভতা ও জড়তা। ‘আমার পথ’ প্রবদ্ধেও লেখক আপন সত্যকে চেনার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন নিজেকে চেনা ও নিজে সত্যকে জানার মধ্যে দিয়ে প্রাবন্ধিক আত্নবিশ্বাসী ও আত্নপ্রত্যয়ী হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। কারণ তিনি জানেন আত্নাকে চিললেই আত্ননির্ভরতা আসবে। ‘আমার পথ’ প্রবদ্ধে লেখক আপন সত্যকে চেনার মধ্যে দিয়ে বোঝাতে চেয়েছেন পরনির্ভরতা কোনো মানুষেরই কাম্য নয়। কারণ আত্নশক্তিতে বলীয়ান ব্যক্তি সত্যর শক্তিতে ভাস্বর। আর এমন ইঙ্গিত উদ্দীপকে ও প্রকাশ পেয়েছে। এসব বিচারে বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।