বিসিএস লিখিত ও প্রিলি পরীক্ষায় তিনটা অংশ থাকে ভৌত বিজ্ঞান জীববিজ্ঞান এবং আধুনিক বিজ্ঞান।
বিসিএস বিজ্ঞান প্রথম অংশ
ভৌতবিজ্ঞান
পদার্থের অবস্থা
পরীক্ষায় আগত প্রশ্ন
১. কোন ধাতু স্বাভাবিক তাপমাত্রায় তরল থাকে? উ: পারদ (৩৩তম)
২. সর্বাপেক্ষা হালকা গ্যাস- উ: হাইড্রোজেন (৩৩তম)
# যার ভর আছে, যা কোন স্থান দখল করে অবস্থান করে, তাকে পদার্থ বলা হয়। পদার্থবিদ্যার ভাষায়, একটি পদার্থের চিহ্নযোগ্য অবস্থাকেই পদার্থের অবস্থা বলা হয়। আমরা আমাদের প্রতিদিনের জীবনে পদার্থের ৩ ধরনের অবস্থা দেখে থাকি: কঠিন, তরল এবং গ্যাসীয়। এছাড়াও আরো কিছু অবস্থা আছে, যা কেবলমাত্র চরম পরিস্থিতিতেই পাওয়া যায়। যেমন: বোস আইনস্টাইন কনডেনসেট, নিউট্রন ডিজেনারেট ম্যাটার এবং কোয়ার্ক গ্রুওন প্লাজমা, যেগুলো যথাক্রমে চরম নিম্ন তাপমাত্রা, চরম ঘনত্ব এবং চরম উচ্চশক্তির কোল্ড চার্জড পদার্থের ক্ষেত্রেই দেখা যায়।
ক. কঠিন অবস্থা
কঠিন পদার্থের ক্ষেত্রে গাঠনিক কণাগুলো একত্রে অবস্থান করে। তাদের আন্তঃআণবিক শক্তি অনেক বেশি থাকে, ফলে তারা মুক্তভাবে চলাচল করতে পারে না, শুধু কম্পিত হতে পারে। ফলস্বরুপ, কঠিন পদার্থের একটি নির্দিষ্ট আকার ও আয়তন থাকে। কঠিন পদার্থের আকার শুধুমাত্র ভাঙা বা কাটার সময় সৃষ্ট বলের কারণেই পরিবর্তিত হতে পারে।
খ. তরল অবস্থা
তরল পদার্থ প্রায় অসঙ্কোচনীয় প্রবাহী যা তার ধারকের আকার গ্রহণ করে কিন্তু চাপের প্রভাবমুক্ত নির্দিষ্ট আয়তন থাকে। এই আয়তনও পরিবর্তিত হবে যদি তাপমাত্রা ও চাপ পরিবর্তিত হয়। যখন কোন কঠিন পদার্থকে তার গলনাঙ্ক এর উপরে তাপ দেয়া হয়, তখন তা তরল পদার্থে রূপান্তরিত হয়, তবে এক্ষেত্রে চাপ অবশ্যই ঐ পদার্থের ত্রৈধ বিন্দুর চেয়ে বেশী হতে হবে। আন্তঃআণবিক (অথবা আন্তঃপারমাণবিক অথবা আন্তঃআয়নিক) বল অবশ্যই প্রয়োজনীয়, কিন্তু অণুটির একে অন্যের সাপেক্ষে মুক্তভাবে চলাচল করার মত প্রয়োজনীয় শক্তি আছে এবং এদের গঠন ভ্রাম্যমাণ। এর মানে এই দাঁড়ায় যে তরলের গঠন নির্দিষ্ট নয়, কিন্তু তা তরলের ধারকের গঠন দ্বারা নির্ধারিত হয়। তরল পদার্থের আয়তন সাধারণত যে কঠিন পদার্থ থেকে তরল তৈরি করা হয়েছে সে কঠিনের চেয়ে বেশী হয়। ব্যতিক্রম পানি। যে সর্বশেষ তাপমাত্রায় একটি তরল পদার্থ তরলাবস্থায় থাকে তাকে তার ক্রান্তি তাপমাত্রা বলে।
গ. বায়বীয় অবস্থা
গ্যাসের অণুগুলোর পর্যাপ্ত গতিশক্তি থাকে। ফলে তাদের মধ্যে আন্তঃআণবিক বলের প্রভাব নগণ্য হয় (আদর্শ গ্যাসের ক্ষেত্রে শুন্য), এবং এদের পার্শ্ববর্তী অণুগুলোর দূরত্ব অণুগুলোর আকারের চেয়েও অনেক বড়। গ্যাসের নির্দিষ্ট আকার বা আয়তন থাকে না, এরা এদের ধারকের আকার ও আয়তন দখল করে। ক্রান্তি তাপমাত্রার নিচে গ্যাসকে বাষ্পও বলা হয়, যাকে শুধু চাপ কমিয়ে শীতলীকরণ ছাড়ায় তরলীভূত করা যায়। বাষ্প তরল (অথবা কঠিন) এর সাথে সাম্যাবস্থায় থাকতে পারে, যেখানে গ্যাসের চাপ তরল (বা কঠিন) এর ক্রান্তি চাপের সমান হয়।
প্লাজমা অবস্থা
গ্যাসের মতোই প্লাজমার নির্দিষ্ট আকার বা আয়তন নেই। কিন্তু এতে বিদ্যুৎ পরিবহণ ক্ষমতা আছে, যা গ্যাসের নেই। এটি চৌম্বকক্ষেত্র এবং বৈদ্যুতিক প্রবাহ তৈরি করতে পারে এবং তাড়িতচৌম্বক ক্ষেত্রের প্রতি শক্তিশালী সাড়া প্রদান করতে পারে। ধনাত্মক চার্জযুক্ত নিউক্লেই পৃথক ইলেকট্রনের ‘সমুদ্রে’ ভাসতে থাকে, যেমনটা হয় পরিবাহী ধাতুর ক্ষেত্রে। আসলে এই ‘সমুদ্র’ ই প্লাজমা অবস্থার
পদার্থকে বিদ্যুৎ পরিবহন করতে দেয়। প্লাজমা অবস্থা নিয়ে অনেকেরই ভুল ধারণা রয়েছে, কিন্তু এটি আসলে পৃথিবীতে অহরহই দেখা যায় এবং বেশিরভাগ লোক এটাকে জানা ছাড়াই সাধারণ ভাবেই দেখে। বিদ্যুৎ চমকানো, বৈদ্যুতিক স্পার্ক, ফ্লুরোসেন্ট বাতি, নিওন বাতি, প্লাজমা টিভি, কিছু ধরনের শিখা এবং সকল তারাগুলো প্লাজমা অবস্থার আলোকিত বস্তুগুলোর উদাহরণ।
এটমের গঠন
পরীক্ষায় আগত প্রশ্ন
১. বরফ পানিতে ভাসে কারণ বরফের তুলনায় পানির- উ: ঘনত্ব বেশি (৩৪তম)
২. সর্বাপেক্ষা হালকা গ্যাস- উ: হাইড্রোজেন (৩৪তম)
৩. নিচের কোনটি বিদ্যুৎ পরিবাহীতা সবচেয়ে বেশি? উ: রূপা (৩৪তম)
৪. পরমাণুর নিউক্লিয়াসে কি কি থাকে? উ: প্রোটন ও নিউট্রন (৩৪তম)
৫. ভারী পানির রাসায়নিক সংকেত- উ: D₂O(৩১,৩৩ তম)
৬. আইসোটোপের ক্ষেত্রে কোনটি সঠিক? উ: প্রোটন সংখ্যা সমান থাকে (২১,৩১তম)
৭. যে সকল নিউক্লিয়াসের নিউট্রন সমান কিন্তু ভর সংখ্যা সমান নয়, তাদের কে বলা হয়? উ: আইসোটোন (২৯তম)
৮. পরমাণু (Atom) চার্জ নিরপেক্ষ হয়, কারণ পরমাণুতে- উঃ ইলেকট্রন ও প্রোটনের সংখ্যা সমান (২৪ তম)
৯. আর্সেনিকের পারমাণবিক সংখ্যা কত? উত্তর: ৩৩ (২৪তম)
১০. রেডিও আইসোটোপ ব্যবহৃত হয়- উ: গলগন্ড রোগ নির্ণয়ে (২৩তম)
১১. নিউট্রন আবিস্কার করেন- উ: চ্যাডউইক (২২তম)
১২. যে নিউক্লিয়াসের নিউট্রন সংখ্যা সমান কিন্তু ভরসংখ্যা সমান নয় তাদের বলা হয়- উ: আইসোটোন (২২তম)
# গ্রিক দার্শনিক ডেমোক্রিটাস খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে এ অভিমত প্রকাশ করেন যে, সকল পার্থিব বস্তু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অবিভাজ্য কণার দ্বারা গঠিত। ডেমোক্রিটাস এ ক্ষুদ্রতম কণার নাম দেন atomos
# ১৮০৩ সালে জন ডাল্টন পরমাণুবাদ প্রদান করেন। এটিকে আধুনিক রসায়নের ভিত্তি বলা হয়। এ কারণে জন ডাল্টনকে ‘আধুনিক রসায়নের জনক’ বলা হয়।
# রাসায়নিক মৌলের ক্ষুদ্রতম অংশ যার স্বাধীন অস্তিত্ব নেই (নিষ্ক্রিয় গ্যাসের পরমাণু ব্যতীত), কিন্তু রাসায়নিক বিক্রিয়ায় সরাসরি অংশ গ্রহণ করতে পারে সেসব আণুবীক্ষণিক কণিকাকে পরমাণু বলে।
# যে সব সূক্ষ কণিকা দিয়ে পরমাণু গঠিত, তাদেরকে মৌলিক কণিকা বলে। পরমাণুর তিনটি উপাদান। এরা হচ্ছে ইলেকট্রন, প্রোটন এবং নিউট্রন। এ তিনটি কণিকা বিভিন্ন সংখ্যায় একত্রিত হয়ে ভিন্ন ভিন্ন পরমাণু গঠন করে। ধনাত্মক আধানযুক্ত প্রোটন এবং আধানহীন নিউট্রন একত্রিত হয়ে নিউক্লিয়াস গঠন করে আর এদেরকে ঘিরে ঋণাত্মক আধানের ইলেকট্রন ঘুরছে।
ইলেকট্রন
পরমাণুর ক্ষুদ্রতম কণিকা ইলেকট্রন। ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে স্যার জে, জে, থমসন সর্বপ্রথম ইলেকট্রনের অস্তিত্ব আবিষ্কার করেন। একটি ইলেকট্রনের আসল ভর অতি সামান্য 9.1085×10-2 g। ইলেকট্রনের আধান -1.6×10-19 কুলম্ব। ইলেকট্রন নিউক্লিয়াসের চারদিকে ঘূর্ণায়মান। ইলেকট্রনকে সাধারণত প্রতীক দ্বারা প্রকাশ করা হয়ে থাকে।
(ইলেক্ট্রন, প্রোটন, নিউট্রন ছাড়াও নানা রকম অস্থায়ী প্রোটন কণিকা থাকে। যেমন: মেসন, বোসন)
প্রোটন
ধনাত্মক আধান বিশিষ্ট কণিকা যা নিউক্লিয়াসের মধ্যে থাকে। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী আর্নেস্ট রাদারফোর্ড প্রোটনের অস্তিত্ব প্রমাণ করেন। একটি পরমাণুতে ইলেকট্রনের সমান সংখ্যক প্রোটন থাকে। প্রোটনের ভর 1.673×10-24g যা পারমাণবিক ভর স্কেল অনুসারে 1.007276 amu (এখানে amu হল atomic mass unit)। একটি হাইড্রোজেন পরমাণু থেকে একটি ইলেকট্রন সরিয়ে নিলেই প্রোটন পাওয়া যায় তাই একে প্রোটন (H’) বলা যেতে পারে। একে সাধারণত দ্বারা প্রকাশ করা হয়ে থাকে।
নিউট্রন
ইলেকট্রন ও প্রোটনের ন্যায় নিউট্রনও একটি মৌলিক কণিকা তবে এটি আধানবিহীন। আধানবিহীন (neutral) হওয়ায় এর এই নাম দেয়া হয়েছে। নিউট্রন নিউক্লিয়াসের মধ্যে অবস্থান করে। ১৯৩২ সালে জেমস চ্যাডউইক নিউট্রন আবিষ্কার করেন। এর আসল ভর 1.675×1024g যা পারমাণববিক ভর স্কেল অনুসারে 1.008665 amu। এর ভর ইলেকট্রনের ভরের প্রায় 1839 গুণের সমান। একে সাধারণত । দ্বারা প্রকাশ করা হয়ে থাকে। নিউট্রন পরমাণুর কেন্দ্রে প্রোটনের সাথে যুক্ত থাকে। এই দুই কণিকার সম্মিলিত ভরকে পারমাণবিক ভর বলা হয়ে থাকে।
ডাল্টনের পরমাণুবাদ
১৮০৩ সালে ইংরেজ পদার্থ ও রসায়ন বিজ্ঞানী জন ডাল্টন পরমাণু সম্পর্কে একটি তত্ত্ব প্রকাশ করেন যা ডাল্টনের পরমাণুবাদ নামে পরিচিত। তাঁর প্রদত্ত পরমাণুবাদে মোট পাঁচটি স্বীকার্য আছে। এই স্বীকার্য পাঁচটি হলো-
১. পদার্থ অতি ক্ষুদ্র কণাসমূহ দ্বারা গঠিত, এই কণাগুলোর নাম পরমাণু।
২. একই পদার্থের পরমাণুসমূহের আকার, ভর এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্য একই রকম হয়, ভিন্ন ভিন্ন পদার্থের পরমাণুসমূহের আকার, ভর এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্য ভিন্ন রকমের হয়।
৩. পরমাণুসমূহ বিভাজিত, সৃষ্টি বা ধ্বংস হতে পারে না।
৪. সরল পূর্ণসংখ্যক অনুপাতে বিভিন্ন পদার্থের পরমাণু সংযুক্ত হয়ে রাসায়নিক যৌগের সৃষ্টি করে।
৫. রাসায়নিক বিক্রিয়াসমূহে পরমাণু সংযোজিত, বিভক্ত বা পুনর্বিন্যাসিত হয়।
# ১৮ শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত ডাল্টনের স্বীকার্যসমূহকে বিজ্ঞানীরা মেনে নিয়েছিলেন। কারণ স্বীকার্যসমূহ অস্বীকার করার মতো যথেষ্ট তথ্য তাদের ছিল না। ১৮৯৭ সালে জে জে থমসন ইলেক্ট্রন আবিষ্কার করেন। এর ফলে ডাল্টনের তৃতীয় স্বীকার্যের অংশবিশেষ (পরমাণু বিভাজিত হতে পারে না) ভুল প্রমাণিত হয়।
থমসন পরমাণু মডেল
১৮৯৭ সালে বিজ্ঞানী জে জে থমসন এই মডেল প্রস্তাব করেন। এই মডেল অনুসারে পুডিংয়ের ভিতর কিশমিশ যেমন বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে থাকে পরমাণুতে ঠিক তেমনি নিরবচ্ছিন্নভাবে বণ্টিত ধনাত্মক আধানের মধ্যে ইলেকট্রন ছড়িয়ে আছে।
রাদারফোর্ডের পরমাণুবাদ
১৯০৯ সালে বিজ্ঞানী আর্নেস্ট রাদারফোর্ড আলফা কণিকা বিক্ষেপণ পরীক্ষা সম্পাদন করেন। পরীক্ষালব্ধ ফলাফল থেকে ১৯১১ সালে তিনি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, পরমাণুর কেন্দ্রে ধনাত্মক আধানযুক্ত অত্যন্ত ভারী একটি মূলবস্তু আছে। একে পরবর্তীতে নাম দেওয়া হয় নিউক্লিয়াস। পরমাণুর বাকি অংশ জুড়ে রয়েছে ইলেকট্রন আর ইলেকট্রনগুলো নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে ঘুরছে।
নীল্স বোরের পরমাণুবাদ
১৯১৩ সালে ডেনমার্কের পদার্থবিজ্ঞানী নীলস বোর তাঁর পরমাণু মডেলের জন্য দুটি প্রস্তাব রাখেন যা বোরের স্বীকার্য নামে পরিচিত। এগুলো হলো-
১. স্থায়ী অবস্থা স্বীকার্য (Postulates of Stationary States)
২. কম্পাঙ্ক স্বীকার্য (Postulates of Frequency)
কার্বনের বহুমুখী ব্যবহার
কার্বন একটি অধাতু। এর দুটি রূপভেদ (হীরক ও গ্রাফাইট) রয়েছে। এর মধ্যে হীরকে আলোর পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন ঘটে, এটি সবচেয়ে কঠিন পদার্থ এবং বিদ্যুৎ পরিবহন করে না। তবে গ্রাফাইটে কার্বন-কার্বন ত্রিবন্ধন ব্যবহৃত হওয়ায় এটি বিদ্যুৎ পরিবহন করে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কার্বনের বহুমুখী ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। যেমন: হীরক চূর্ণ রঙ তৈরিতে ও কাঁচ কাটতে ব্যবহার করা হয়, কালো রঙ তৈরিতে ভূসা কয়লা ব্যবহার করা হয়, অস্তিজ কয়লাকে HCI দ্বারা প্রক্রিয়াজাত করে আইভরি ব্ল্যাক তৈরি করা হয়। এছাড়া স্টেইনলেস স্টিল তৈরিতে ৭৪% লোহা, ১৮% ক্রোমিয়াম, ৮% নিকেল ও ১% কার্বন ব্যবহার করা হয়। এছাড়া জৈব বস্তুর অসম্পূর্ণ দহনে যে কার্বন-ডাই-অক্সাইড তৈরি হয় তা পানিতে দ্রবীভূত করে সোডা ওয়াটার এবং একে চাপ প্রয়োগে কঠিন করে শুষ্ক বরফ তৈরি করা হয়।
ক। বহুরূপতা হলো প্রকৃতিতে একই মৌলের ভিন্ন ভিন্ন রূপে অবস্থান করার প্রবণতা
খ। কার্বন একটি বহুরূপী মৌল
গ। কার্বনের রূপভেদ হলো- হীরক ও গ্রাফাইট ঘ। প্রকৃতিতে সবচেয়ে শক্ত পদার্থ হলো- হীরক ঙ। কাঁচ কাটতে ব্যবহৃত হয়- হীরা
চ। উড পেন্সিলের সীসরূপে ব্যবহৃত হয়- গ্রাফাইট
ছ। কার্বন সবচেয়ে বেশি আছে অ্যানথ্রাসাইড কয়লায় একখন্ড হীরক হচ্ছে- একটি বৃহৎ অণু
জ। হীরক উজ্জ্বল দেখায় পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলনের জন্য
ঝ। কয়লার মূল উপাদান- কার্বন ক্যাটেনেশন ধর্ম দেখায়- কার্বন।
ঞ। পীট কয়লার বৈশিষ্ট্য- নরম ও ভেজা।
ট। জৈব যৌগ হলো- কার্বন ও অন্যান্য মৌলের সমন্বয়ে গঠিত যৌগ।
ঠ। কার্বন পরমাণুবিহীন প্রায় সকল যৌগ- অজৈব যৌগ।
ড। সাধারণ ড্রাইসেলে ধনাত্মক পাত হিসেবে ব্যবহৃত হয়- কার্বনদণ্ড।
ঢ়। শুষ্ক কোষে ইলেকট্রন দান করে- কার্বনদণ্ড।
ণ। মসৃণকারক হিসেবে ব্যবহৃত হয়- ‘গ্রাফাইট’।
ত। পারমাণবিক চুল্লীতে নিউট্রনের গতি হ্রাসের জন্য মন্থরক হিসেবে ব্যবহৃত হয়- ‘গ্রাফাইট’।
থ। কালো রং হিসেবে ছাপার কালিতে ব্যবহৃত হয়- ‘ভূসা কয়লা’।
দ। কার্বন হলো একটি বিজারক পদার্থ।
ধ। চিনি শোধন করতে ব্যবহৃত হয়- প্রাণিজ কয়লা।
ন। ধাতু নিষ্কাশনে ব্যবহৃত হয়- কাঠ কয়লা।
প। এটি নরম ও সাবানের মতো পিচ্ছিল হওয়ায় গ্রাফাইট ব্যবহৃত হয়-কলকব্জায় পিচ্ছিলকারক বা লুব্রিকেন্ট হিসেবে।
ফ। গ্রাফাইট থেকে সীস তৈরি হয় কাঁদা মিশিয়ে।
ব। এক্সরের সাহায্যে চেনা যায়- আসল না নকল হীরা।
ভ। হীরকচূর্ণ দিয়ে তৈরি করা হয়- রং।
ম। অপর্যাপ্ত আবদ্ধ পাত্রে প্রাণীর হাড় ও রক্ত রেখে তাপ প্রয়োগ করলে বিধ্বংসী পাতনের ফলে এক প্রকার কয়লা উৎপন্ন হয় একে বলে- প্রাণিজ কয়লা।
য। প্রাণিজ দেহের হাড়ের বিধ্বংসী পাতনের ফলে উৎপন্ন কয়লাকে বলে- অস্থিজ কয়লা। র। অস্থিজ কয়লাকে HCI দ্বারা প্রক্রিয়াজাত করে তৈরি করা হয়- আইভরি ব্ল্যাক।
ল। আইভরি ব্ল্যাক ব্যবহৃত হয় কালো রং হিসেবে
শ। অধাতু হলেও বিদ্যুৎ পরিবহন করে- গ্রাফাইট
ষ। মৌলের যৌগের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি- কার্বন
স। নতুন আবিষ্কৃত যৌগ ‘বোরোজেন’ হীরক অপেক্ষা- কঠিন
এসিড, ক্ষার, লবন
পরীক্ষায় আগত প্রশ্ন
১. গাড়ির ব্যাটারীতে কোন ধরনের এসিড ব্যবহৃত হয়? উ: সালফিউরিক এসিড (৩৪তম)
২. দুধ থাকে- উ: ল্যাকটিক এসিড (৩২তম)
৩. কোনটি জৈব অম্ল? উ: এসিটিক এসিড (৩২তম)
৪. স্বর্ণের খাদ বের করতে ব্যবহার করা হয়- উ: নাইট্রিক এসিড (৩২তম)
৫. কৃষি জমিতে প্রধানত চুন ব্যবহার করা হয়- উ: মাটির অম্লতা হ্রাসের জন্য (৩১তম)
৬. নিচের কোনটি ক্ষারকীয় অক্সাইড? উ: MgO (২৯তম)
৭. স্যালিক এসিড- উত্তর: টমেটোতে পাওয়া যায় ২৬ তম বিসিএস
৮. স্বর্ণের খাদ বের করতে কোন এসিড ব্যবহার করা হয়? উ: নাইট্রিক অ্যাসিড (২৪তম)
৯. “অ্যাকোয়া রেজিয়া” বলতে বুঝায়- উ: কনসেনট্রেটেড নাইট্রিক ও হাইড্রোক্লোরিক এসিডের মিশ্রণ (২৪তম)
এসিড (Acid)
Acid শব্দটির উৎপত্তি এসিডাস (Acidus); যার অর্থ টক। যৌগের অণুতে এক বা একাধিক প্রতিস্থাপনীয় হাইড্রোজেন পরমাণু থাকে এবং ঐ প্রতিস্থাপনীয় হাইড্রোজেনকে ধাতু বা যৌগমূলক দ্বারা আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে প্রতিস্থাপিত করা যায় এবং যা ক্ষারকের সাথে প্রশমন বিক্রিয়া করে লবণ ও পানি উৎপন্ন করে তাকে অম্ল বা এসিড (Acid) বলে।
# টক স্বাদযুক্ত সব বস্তুর মধ্যে এসিড থাকে। তেঁতুল, লেবু প্রভৃতিতে জৈব এসিড বিদ্যমান। এ সকল এসিড অতি অল্প পরিমাণে থাকে বলে ক্ষতিকারক নয়। কিন্তু পরীক্ষাগারে ব্যবহৃত এসিড (যেমন: হাইড্রোক্লোরিক এসিড, সালফিউরিক অ্যাসিড ইত্যাদি) অত্যন্ত তীব্র। এগুলোকে অজৈব বা খনিজ এসিড বলে।
#যে এসিড যত বেশি হাইড্রোজেন আয়ন দান করতে পারে সে এসিড তত বেশি শক্তিশালী এবং pH এর মান তত কম। এসিড নীল লিটমাসকে লাল করে এবং ধাতুর সাথে বিক্রিয়া করে হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন করে।
# এসিডের জলীয় দ্রবণ ক্ষারকের সাথে বিক্রিয়া করে পানি ও লবণ উৎপাদন করতে পারে। যেমন: সালফিউরিক এসিড (H₂SO₄) সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইডের (NaOH) সাথে বিক্রিয়া করে পানি (2H₂O) এবং সোডিয়াম সালফেট (Na2SO4) উৎপাদন করে।
H2SO4 + 2 NaOH = 2 H2O + 2Na2SO4
এখানে সালফিউরিক এসিড H’ আয়ন দান করে। আর সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড OH দান করে।
# ল্যাবরেটরি এবং শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহৃত এসিডগুলো অনেকক্ষেত্রেই বেশ শক্তিশালী। সাধারণত হাইড্রোক্লোরিক এসিড, নাইট্রিক এসিড বা সালফিউরিক এসিডের লঘু দ্রবণ ব্যবহার করা হয়। এগুলোও ত্বকের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
মনে রাখুন:
১. লেবু জাতীয় ফলে যে এসিড থাকে তা সাইট্রিক এসিড সংকেত: C₂H₂O, বা CH₂COOH-C(OH)COOH-CH,COOH
২. ভিনেগারে যে এসিড থাকে তা এসিটিক এসিড বা ইথানয়িক এসিড সংকেত: C₂H₂O, বা CH,COOH
৩. ভিটামিন সি হচ্ছে অ্যাসকরবিক এসিড সংকেত: C₂H₂O, বা HC,H,O,
৪. চা-এ থাকা এসিড: ট্যানিক এসিড সংকেত: C76H52046
৫. কার্বনেটেড পানীয়তে থাকা এসিড, কার্বনিক এসিড সংকেত: H₂CO₃
৬. আমাদের পাকস্থলীতে খাবার হজমে সহায়তার জন্য যে এসিড থাকে তা হাইড্রোক্লোরিক এসিড সংকেত: HCI ক্ষারক
ক্ষারক
ক। ক্ষারক এক শ্রেণীর রাসায়নিক যৌগ যা হাইড্রোজেন আয়ন (H’) গ্রহণ করতে সক্ষম। যেমন ধাতুর অক্সাইড বা হাইড্রোক্সাইডসমূহ ক্ষার।
খ। পানিতে দ্রবণীয় ক্ষারক যা হাইড্রোক্সাইড আয়ন (OH) প্রদান করে তাকে ব্রনস্টেড-লাউরির মতবাদ অনুযায়ী ক্ষার বলা হয়।
গ। ক্ষারকের অন্যান্য মতবাদ বা সংজ্ঞার্থের মধ্যে রয়েছে ইলেক্ট্রন জোড় দান, হাইড্রোক্সাইড আয়নের উৎস বা আরহেনিয়াস মতবাদ। এইসব রাসায়নিক যৌগ পানিতে দ্রবীভূত হয়ে হাইড্রোজেন আয়ন অবমুক্ত করে দ্রবণের pH এর মান প্রশমিত পানির চেয়ে বেশি অর্থাৎ ৭ এর বেশি।
ঘ। সবচেয়ে প্রচলিত ক্ষারকসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড, অ্যামোনিয়া।
ঙ। রাসায়নিকভাবে অম্লের বিপরীতধর্মী পদার্থ হল ক্ষারক। অম্ল এবং ক্ষারকের মধ্যে বিক্রিয়াকে বলা হয় প্রশমন বিক্রিয়া।
লবণ
# লবণ হলো একটি আয়নিক যৌগ যা অম্ল ও ক্ষারকের মধ্যে সংঘটিত প্রশমন বিক্রিয়ার মাধ্যমে উৎপন্ন হয়। অথবা, কোনে এসিডের প্রতিস্থাপনীয় হাইড্রোজেন পরমাণু কোনো ধাতু বা ধাতুর ন্যায় ক্রিয়াশীল মূলক দ্বারা আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে প্রতিস্থাপিত হয়ে নতুন যে যৌগ গঠন করে তাকে ‘লবণ’ বলে।
# লবণ সমান সংখ্যক ক্যাটায়ন (ধনাত্মক আধানযুক্ত আয়ন) ও অ্যানায়ন (ঋণাত্মক আধানযুক্ত আয়ন) দ্বারা গঠিত হয়। যার ফলে এটি আধান নিরপেক্ষ হয়। আয়নসমূহের উপাদান অজৈব হতে পারে, যেমন: ক্লোরাইড (CI)। আবার জৈব হতে পারে, যেমন: এসেটেট (CH,CO₂); এবং এক অণুবিশিষ্ট হতে পারে, যেমন: ফ্লোরাইড (F), অথবা হতে পারে বা অণুবিশিষ্ট, যেমন: সালফেট (SO4)।
পদার্থের ক্ষয়
* সাধারণত সক্রিয় ধাতুসমূহের দ্রুত ক্ষয় হয়।
* নতুন তামা বা কপারের বর্ণ গোলাপী বা তামাটে। কিছুদিন রেখে দিলে কপারের বর্ণ বাদামী হয়ে যায়। কারণ এর উপ কপার অক্সাইডের আবরণ পরে।
* তামা ও পিতলের তৈরি পাতিল ও মসজিদ-মন্দিরের নকশা কিছুদিন পরিষ্কার করা না হলে এর উপরে সবুজ বার তাম্রমলের আবরণ পরে। এটি এক প্রকার কপার লবণ।
* তাম্রমল সাধারণত কপার কার্বনেট ও কপার হাইড্রক্সাইডের মিশ্রণ (CuCO, Cu(OH)₂)। তাম্রমল জৈব এসিডে দ্রবীভূত হয়। তাই জৈব এসিড সমৃদ্ধ ফল দিয়ে এদের পরিষ্কার করলে সোনালী সৌন্দর্য ফেরত পায়।
* স্বর্ণ ও প্লাটিনাম নিষ্ক্রিয়। হাজার বছরেও এগুলো ক্ষয় হয় না।
পদার্থ দুই ভাবে ক্ষয় হতে পারে-
এক. ইরোশন: প্রাকৃতিকভাবে ভৌত পরিবর্তন জনিত কারণে ক্ষয় হয়, একে ইরোশন (Erosion) বলা হয়। এটি একটি যান্ত্রিক প্রক্রিয়া (Mechanical Process)। আঘাত, ঘর্ষণ বা ব্যবহার জনিত কারণে এই ক্ষয় হয়। ঘর্ষণ কমানোর জন্য বিভিন্ন লুব্রিকেশন ব্যবহার করা হয় যাতে এই ধরনের ক্ষয় থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। প্রাকৃতিকভাবে বাতাস, পানির মাধ্যমেও এই ক্ষয় হতে পারে তাই ব্যবহৃত বস্তুর অবস্থান, কাজের ধরন ও প্রকৃতি (Types and Exposure) পরিবর্তন করে এই ক্ষয় কমানো যেতে পারে।
দুই. করোশন: পদার্থেয় ক্ষয়ের কারণ যখন কোন রাসায়নিক বিক্রিয়া হয় তখন তাকে করোশন (Corrosion) বলা হয়। এটি একটি তড়িৎ যান্ত্রিক প্রক্রিয়া। রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় কোন পদার্থ এনোড হিসেবে কাজ করলে তা ক্ষয় হতে পারে। এই ক্ষয় থেকে পদার্থকে রক্ষা (Electro Mechanical Process) করার জন্য ইলেক্ট্রোপ্লেটিং (Electroplating) করা হয়। সতর্ক ব্যবহারের মাধ্যমে ধাতু যাতে এনোড হিসেবে কাজ না করে সেই বিষয়ে খেয়াল রেখে এই ক্ষয় কমানো যেতে পারে।
সাবানের কাজ
পরীক্ষায় আগত প্রশ্ন
১. টুথপেস্টের প্রধান উপাদান- উ: সাবান ও পাউডার (১৭তম)
ক। সাবান হল উচ্চ আণবিক ওজন বিশিষ্ট জৈব ফ্যাটি এসিড (যেমন: ওলিক অ্যাসিড, স্টিয়ারিক অ্যাসিড, পামিটিক অ্যাসিড) – এর সোডিয়াম বা পটাশিয়াম লবণ। সাবান একটি মিশ্র লবণ।
খ। সাধারণ উষ্ণতায় সাবান অনুদ্বায়ী কঠিন পদার্থ ও পানিতে দ্রাব্য।
গ। সাবানের জলীয় দ্রবণ ক্ষারীয়। পানিতে মিশে ফেনা উৎপন্ন করে।
ঘ। সাবান তৈরির জন্য নারিকেল, তিল ও তুলোবীজের তেল, এবং প্রাণীজ চর্বি ব্যবহার করা হয়। এই তেলের সঙ্গে তীব্র ক্ষার, যেমন: NaOH বা KOH এর বিক্রিয়ায় সাবান উৎপন্ন হয়।
ঙ। দ্রবীভূত সাবান হল সোডিয়াম পামিটেট (C15H31COONa), সোডিয়াম অলিয়েট (C17H33COONa), সোডিয়াম স্টিয়ারেট (C17H35COONa) ইত্যাদি পানিতে দ্রবীভূত সাবান বলে, মৃদু জলে প্রচুর ফেনা উৎপন্ন করে। সাবানে পানি মেশালে আর্দ্র-বিশ্লেষণ ঘটে ক্ষার উৎপন্ন করে, সেজন্য সাবান পানি পিচ্ছিল বোধ হয়।
চ। সাবান জৈব এসিডের অজৈব লবণ। সাবান সাদা ও গন্ধহীন। উপাদানের প্রকৃতি অনুসারে বিভিন্ন বর্ণ ও গন্ধযুক্ত সাবান পাওয়া যায়। সোডিয়াম সাবান শক্ত হয়। এটি জামা-কাপড় কাচতে ব্যবহার করা হয়। পটাসিয়াম সাবান নরম হয়। এর সঙ্গে সুগন্ধি ও রং মিশিয়ে গায়ে মাখার সাবান প্রস্তুত করা হয়।
ব্যবহার: জামা-কাপড় পরিষ্কার করতে এবং দেহের ময়লা দূর করতে সাবান ব্যবহৃত হয়। জীবাণুনাশক হিসাবে কার্বলিক সাবান, নিম সাবান ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। রঞ্জন শিল্পে সাবান ব্যবহৃত হয়।
ডিটারজেন্ট
# ডিটারজেন্ট হল লবণ জাতীয় জৈব ও অজৈব পদার্থের মিশ্রণ। ডিটারজেন্টের গঠন অনেকটা সাবানের মত। এগুলো কয়লা ও পেট্রোলিয়ামের হাইড্রোকার্বন থেকে তৈরি হয়। ওয়াশিং পাউডারে প্রায় 10-30% ডিটারজেন্ট থাকে। ডিটারজেন্টে সোডিয়াম সালফেট ও সোডিয়াম সিলিকেট মেশানো হয়, কারণ এরা ডিটারজেন্টকে শুষ্ক রাখে। ডিটারজেন্টের সঙ্গে সোডিয়াম ট্রাইপলি ফসফেট বা সোডিয়াম কার্বনেট মিশিয়ে একে ক্ষারীয় করলে এর ময়লা পরিষ্কারের ক্ষমতা অনেকগুণ বেড়ে যায়। ডিটারজেন্টের কার্বক্সি মিথাইল সেলুলোজ উপাদানটি জলের মধ্যে ময়লার অণুগুলিকে প্রলম্বিত রাখে। ব্লিচিং পদার্থ হিসাবে সোডিয়াম পারবোরেট মেশালে শুভ্রতা বাড়ে।
ব্যবহার: বর্তমান যুগে শুধুমাত্র কাপড় কাঁচার কাজ নয়, শ্যাম্পুতে, মুখ পরিষ্কার করতে ডিটারজেন্ট ব্যবহার করা হয়।
তাছাড়া জীবাণুনাশক হিসাবে ও খর জলে ফেনা উৎপন্ন করতে সাবানের অসুবিধা হলেও ডিটারজেন্টের হয় না। এসিড মিশ্রিত জল হলেও ডিটারজেন্ট ব্যবহারে অসুবিধা হয় না।
পরিবেশ দুষণ: ডিটারজেন্টগুলো বায়োডিগ্রেডেবল নয়, সহজে এরা পানি বা মাটির সঙ্গে মিশে অন্য পদার্থে বিয়োজিত হতে পারে না। এদের দীর্ঘ শৃঙ্খলগুলি প্রায় অবিকৃত্যাচারে জলের মধ্যে থাকে, তাতে পানি দুষিত হয়। পরিণামে জলজ জীবনের ক্ষতি হয় এবং পরিবেশ দূষণ ঘটে।
ভৌত রাশি এবং পরিমাপ
পরীক্ষায় আগত প্রশ্ন
১. M.K.S পদ্ধতিতে ভরের একক– উ: কিলোগ্রাম (৩৩তম)
০২. কাজ ও বলের একক যথাক্রমে- উত্তর: জুল ও ডাইন (৩১তম)
এই ভৌত জগতে যা কিছু পরিমাপ করা যায় তাকে আমরা রাশি বলি। রাশি দুই প্রকার:
১. মৌলিক রাশি
২. লব্ধ বা যৌগিক রাশি
#যে সকল রাশি স্বাধীন বা যেগুলো অন্য রাশির উপর নির্ভর করে না বরং অন্যান্য রাশি এদের উপর নির্ভর করে তাদেরতে মৌলিক রাশি বলে।
মৌলিক রাশি সাতটি। যথা:
১। দৈর্ঘ্য
২। ভর
৩। সময়
৪। তাপমাত্রা
৫। তড়িৎ প্রবাহ
৬। দীপন তীব্রতা
৭। পদার্থের পরিমাণ
যে সকল রাশি মৌলিক রাশিগুলো থেকে লাভ করা যায় তাদেরকে লব্ধ বা যৌগিক রাশি বলে।
যেমন: বেগ, ত্বরণ, বল প্রভৃতি।
স্কেলার রাশি ও ভেক্টর রাশি
দিকের বিবেচনায় বস্তু জগতের সকল রাশিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা: স্কেলার রাশি এবং ভেক্টর রাশি।
স্কেলার রাশি: যে সকল ভৌত রাশিকে শুধু মান দ্বারা সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করা যায়। যথা: দৈর্ঘ্য, ভর, সময়, দ্রুতি, কাজ, শক্তি, তাপমাত্রা, দীপন ক্ষমতা, তড়িৎ প্রবাহ ইত্যাদি।
ভেক্টর রাশি: যে সকল ভৌত রাশিকে সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করার জন্য মান ও দিক উভয়ের প্রয়োজন হয় তাদেরকে ভেক্টর রাশি বলে। যথা: সরণ, ওজন, বেগ, ত্বরণ, বল, তড়িৎ তীব্রতা, চৌম্বক তীব্রতা ইত্যাদি।
পরিমাপের একক
যে কোন পরিমাপের জন্য একটি আদর্শের প্রয়োজন, যার সাথে তুলনা করে পরিমাপ করা হয়। পরিমাপের এ আদর্শ পরিমাণকে বলা হয় পরিমাপের একক। ১৯৬০ সালে এককের আন্তর্জাতিক পদ্ধতি চালু হয়। এককের এই পদ্ধতিকে বলা হয় আন্তর্জাতিক পদ্ধতি (International Systems of Units) বা সংক্ষেপে এস.আই (S.I)। নিম্নে আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে মৌলিক এককগুলোর জন্য সর্বশেষ গৃহীত আদর্শ উপস্থাপন করা হল:
১. দৈর্ঘ্যের একক (মিটার): ভ্যাকিউয়ামে বা বায়ু শূন্য স্থানে আলো ‘১/২৯৯৭৯২৪৫৮’ সেকেন্ডে যে দূরত্ব অতিক্রম করে, তাকে ১ মিটার বলে।
২. ভরের একক (কিলোগ্রাম): ফ্রান্সের স্যাভ্রেতে ইন্টারন্যাশনাল ব্যুরো অব ওয়েটস্ এন্ড মেজারস-এ সংরক্ষিত প্লাটিনাম- ইরিডিয়াম সংকর ধাতুর তৈরি ৩.৯ সে.মি. ব্যাস এবং ৩.৯ সে.মি উচ্চতা বিশিষ্ট একটি সিলিন্ডারের ভরকে ১ কিলোগ্রাম বলে।
৩. সময়ের একক (সেকেন্ড): একটি সিজিয়াম- ১৩৩ পরমাণুর ৯১৯২৬৩১৭৭০টি স্পন্দন সম্পন্ন করতে যে সময় লাগে তাকে ১ সেকেন্ড বলে।
৪. তাপমাত্রার একক (কেলভিন): পানির ত্রৈধ বিন্দুর তাপমাত্রার ‘১/২৭৩.১৬’ ভাগকে ১ কেলভিন বলে।
৫. গুড়িৎ প্রবাহের একক আশিয়ারী ভ্যাকিউয়ামে বা বায়ু শূণ্য স্থানে এক মিটার দূরত্বে অবস্থিত অসীম দৈর্ঘ্যের এবং উপেক্ষণীয় প্রস্থচ্ছেদের দুটি সমান্তরাল সরল পরিবাহীর প্রত্যেকটিতে যে পরিমাণ তড়িৎ প্রবাহ চললে পরস্পরের মধ্যে প্রতি মিটার দৈর্ঘ্যে ২০ ১০” নিউটন বল উৎপন্ন হয়, তাকে ১ অ্যাম্পিয়ার বলে।
৬. দীপন ক্ষমতার একক (ক্যান্ডলা) ১০ তাকে স্যারকেন ডালে পাটিনামের হিমাঙ্কে (২০৪২ কেলভিন) কোনো কৃষ্ণবস্তুর পৃষ্ঠের ১/৬০০০০০’ বর্গমিটার পরিমিত ক্ষেত্রফলের পৃষ্ঠের অভিলম্ব বরাবর দীপন ক্ষমতাকে ১ ক্যান্ডেলা বলে।
৭. পদার্থের পরিমাণের একক (মোল): যে পরিমাণ পদার্থ ০.০১২ কিলোগ্রাম কার্বন- ১২ এ অবস্থিত পরমাণুর সমান সংখ্যক প্রাথমিক ইউনিট থাকে, তাকে ১ মোল বলে।
ভৌত বিজ্ঞানের উন্নয়ন
পরীক্ষায় আগত প্রশ্ন
১. গ্রিনিচ মান মন্দির অবস্থিত- উ: যুক্তরাজ্যে (৩৩তম)
২. অল্টিমিটার (Altimeter) কি? উ: উচ্চতা পরিমাপক যন্ত্র (৩৩তম)
থেলিস (খ্রিস্টপূর্ব ৬২৮-৫৬৯) সূর্যগ্রহণ সম্পর্কিত ভবিষৎবাণীর জন্য বিখ্যাত। তিনি লোডস্টোনের চৌম্বকধর্ম সম্পর্কে জানতেন।
পিথাগোরাস (খ্রিস্টপূর্ব ৫২৭-৪৯৭) বিভিন্ন জ্যামিতিক উপপাদ্য ছাড়াও কম্পমান তারের উপর তাঁর কাজ রয়েছে। বর্তমান বাদ্যযন্ত্র এবং সংগীত বিষয়ক অগ্রগতির পিছনে তাঁর অবদান আছে।
গ্রিক দার্শনিক ডেমোক্রিটাস (খ্রিস্টপূর্ব ৪৬০-৩৭০) পরমাণু সম্পর্কে প্রথমে ধারণা দেন।
গ্রিক বিজ্ঞানী আর্কিমিডিস (খ্রিস্টপূর্ব ২৮৭-২১২) লিভারের নীতি ও তরলে নিমজ্জিত বস্তুর উপর ক্রিয়াশীল ঊর্ধ্বমুখী বলের সূত্র আবিষ্কার করে ধাতুর ভেজাল নির্ণয়ে সক্ষম হন। তিনি গোলীয় দর্পণের সাহায্যে সূর্যের রশ্মি কেন্দ্রীভূত করে আগুন ধরানোর কৌশল জানতেন।
আলোক তত্ত্বের উপর ইবনে আল হাইথাম (৯৬৫-১০৩৯) এবং আল হাজেন (৯৬৫-১০৩৮) এর অবদান বিশেষ উল্লেখযোগ্য। টলেমী (১২৭-১৫১) ও অন্যান্য বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করতেন যে কোন বস্তু দেখার জন্য চোখ নিজে আলোক রশ্মি পাঠায়। আল হাজেন এই মতের বিরোধিতা করেন এবং বলেন যে, বস্তু থেকে চোখে আলো আসে বলেই আমরা বস্তু দেখতে পাই। আতশি কাজ নিয়ে পরীক্ষা তাকে উত্তল লেন্সের আধুনিকতত্ত্বের কাছাকাছি নিয়ে আসে।
আল মাসুদী (৮৯৬-৯৫৬) প্রকৃতির ইতিহাস সম্পর্কে একটি এনসাইক্লোপিডিয়া লেখেন। এই বইয়ে বায়ুকলের উল্লেখ পাওয়া যায়।
রজার বেকন (১২১৪-১২৯৪) পরীক্ষামূলক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রবক্তা। তাঁর মতে পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষার মাধ্যমেই বিজ্ঞানের সব সত্য যাচাই করা উচিত।
লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি (১৪৫২-১৫১৯) পাখির ওড়া পর্যবেক্ষণ করে উড়োজাহাজের একটি মডেল তৈরি করেছিলেন। তিনি মূলত চিত্রশিল্পি হলেও বলবিদ্যা সম্পর্কে তাঁর তাঁর উল্লেখযোগ্য জ্ঞান ছিল। ফলে তিনি বহু যন্ত্র দক্ষতার সাথে উদ্ভাবন করতে সক্ষম হন।
ডা. গিলবার্ট (১৫৪০-১৬০৩) চুম্বকত্ব নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা এবং তত্ত্ব প্রদানের জন্য চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন।
জার্মানির স্নেল (১৫৯১-১৬২৬) আলোর প্রতিসরণের সূত্র আবিষ্কার করেন। হাইগেন (১৬২৬-১৬৯৫) দোলকীয় গতি পর্যালোচনা করে ঘড়ির যান্ত্রিক কৌশলের বিকাশ ঘটান এবং ‘আলোর তরঙ্গ তত্ত্ব’ উদ্ভাবন করেন।
রবার্ট হুক (১৬৩৫-১৭০৩) পদার্থের স্থিতিস্থাপক ধর্মের অনুসন্ধান করেন।
বিভিন্ন গ্যাসের ধর্ম বের করার জন্য পরীক্ষা নিরীক্ষা চালান রবার্ট বয়েল (১৬২৭-১৬৯১।
ভন গুয়েরিক (১৬০২-১৬৮৬) বায়ু পাম্প আবিষ্কার করেন।
রোমার (১৬৪৪-১৭১০) বৃহস্পতির একটি উপগ্রহের গ্রহণ পর্যবেক্ষণ করে আলোর বেগ পরিমাপ করেন।
কেপলার (১৫৭১-১৬৩০) কোপার্নিকাস যে সৌরকেন্দ্রিক তত্ত্বের ধারণা উপস্থিত করেন তাঁর গাণিতিক বর্ণনা দেন তিনটি সুত্রের সাহায্যে। কেপলার গ্রহদের প্রচলিত বৃত্তাকার কক্ষের পরিবর্তে উপবৃত্তাকার কক্ষপথের ধারণা দেন। গ্রহদের গতিপথ সম্পর্কে তাঁর গাণিতিক সূত্রগুলোর সত্যতা তিনি যাচাই করলেন টাইকোব্রাহের (১৫৪৬-১৬০১) পর্যবেক্ষণ লব্ধ তথ্যের দ্বারা।
আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সূচনা ঘটে ইতালির বিখ্যাত বিজ্ঞানী গ্যালিলিও (১৫৬৪-১৬৪২)-এর হাতে। তিনি প্রথম দেখান যে পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষণ এবং সুশৃঙ্খল ভৌত রাশির সংজ্ঞা প্রদান এবং এদের সম্পর্ক নির্ধারণ বৈজ্ঞানিক কর্মের মূল ভিত্তি। গাণিতিক তত্ত্ব নির্মাণ ও পরীক্ষার মাধ্যমে সে তত্ত্বের সত্যতা যাচাইয়ের বৈজ্ঞানিক ধারার সূচনা করেন গ্যালিলিও। তিনি সরণ, গতি, ত্বরণ, সময় ইত্যাদির সংজ্ঞা প্রদান ও তাদের মধ্যের সম্পর্ক নির্ধারণ করেন। ফলে তিনি বস্তুর পতনের নিয়ম আবিষ্কার ও সৃতিবিদ্যার ভিত্তি স্থাপন করেন।
নিউটন (১৬৪২-১৭২৭) তাঁর বিস্ময়কর প্রতিভার সাহায্যে আবিষ্কার করেন বলবিদ্যা ও বলবিদ্যার বিখ্যাত তিনটি সূত্র এবং বিশ্বজনীন মহাকর্ষ সূত্র। আলোক, তাপ ও শব্দবিজ্ঞানেও তাঁর অবদান আছে। গণিতের নতুন শাখা ক্যালকুলাসও তাঁর আবিষ্কার।
জেমস ওয়াটের (১৭৩৬-১৮১৯) আবিষ্কৃত বাষ্পীয় ইঞ্জিন শিল্প বিপ্লবের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান ওয়েরস্টেড (১৭৭৭-১৮৫১) দেখান যে তড়িৎপ্রবাহের চৌম্বক ক্রিয়া আছে।
মাইকেল ফ্যারাডে (১৭৯১-১৮৬৭), হেনরী (১৭৯৭-১৮৭৯) ও লেঞ্জ (১৮০৪-১৮৬৫) চৌম্বক ক্রিয়া তড়িৎপ্রবাহ উৎপাদন করে এই ঘটনা আবিষ্কার করেন। এর ফলে যান্ত্রিক শক্তিকে তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তর করা সম্ভব হয়।
১৮৬৪ সালে জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল (১৮৩১-১৮৭৯) দেখান যে আলোক এক প্রকার তাড়িতচৌম্বক তরঙ্গ। তিনি তড়িৎক্ষেত্র এবং চৌম্বকক্ষেত্রকে একীভূত করে তাড়িত চৌম্বক তত্ত্বের বিকাশ ঘটান। ১৮৮৮ সালে হেনরিখ হার্জও (১৮৫৭-১৮৯৮) একই রকম বিকিরণ উৎপাদন ও উদঘাটন করেন।
১৮৯৬ সালে মার্কনী (১৮৭৪-১৯৩৭) তাড়িতচৌম্বক তরঙ্গ ব্যবহার করে অধিক দূরত্বে মোর্সকোডে সংকেত পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। তাঁর আগে বাঙালি বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু (১৮৫৮-১৯৩৭) তাড়িতচৌম্বক তরঙ্গ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে প্রেরণ করেন। এভাবে বেতার যোগাযোগ জন্ম লাভ করে।
উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে রনজেন (১৮৪৫-১৯২৩) এক্স রে এবং বেকেরেল (১৮৫২-১৯০৮) ইউরেনিয়ামের তেজস্ক্রিয়তা আবিষ্কার করেন।
ম্যাক্স প্লাংক (১৮৫৮-১৯৪৭) আবিষ্কার করেন বিকিরণ সংক্রান্ত কোয়ান্টাম তত্ত্ব। আলবার্ট আইনস্টাইন (১৮৭৯-১৯৫৫) প্রদান করেন আপেক্ষিক তত্ত্ব।
আর্নেস্ট রাদারফোর্ডের (১৮৭১-১৯৩৭) পরমাণু বিষয়ক নিউক্লিয় তত্ত্ব ও নীলস বোরের (১৮৮৫-১৯৬২) হাইড্রোজেন পরমাণুর ইলেকট্রন স্তরের ধারণা পারমাণবিক পদার্থবিজ্ঞানের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ ছিল।
১৯৩৮ সালে অটো হান (১৮৭৯-১৯৬৮) ও স্ট্রেসম্যান (১৯০২-১৯৮০) বের করেন নিউক্লিয়াস ফিশনযোগ্য। এর ফলে জন্ম নেয় নিউক্লিয় বোমা এবং নিউক্লিয় চুল্লী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের প্রফেসর সত্যেন্দ্রনাথ বসু (১৮৯৪-১৯৭৪) তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তিনি ম্যাক্স প্লাংকের কোয়ান্টাম তত্ত্বের একটি শুদ্ধতর প্রমাণ উপস্থাপন করেন। তাঁর তত্ত্ব বোস আইনস্টাইন সংখ্যায়ন নামে পরিচিত। তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এক শ্রেণীর মৌলিক কণাকে তাঁর নামানুসারে ‘বোসন কণা’ বলা হয়।
তিনজন নোবেল বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী পাকিস্তানের আবদুস সালাম (১৯২৬-১৯৯৬), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শেলডন গ্ল্যাশো (১৯৩২-) এবং স্টিভেন ওয়াইনবার্গ (১৯৩৩) একীভূত ক্ষেত্রতত্ত্বের বেলায় মৌলিক বলগুলোকে একীভূতকরণের ক্ষেত্রে তাড়িত দুর্বল বল আবিষ্কার করে অসামান্য অবদান রাখেন।
নোবেল বিজয়ী ভারতীয় পদার্থবিজ্ঞানী চন্দ্রশেখর রমন (১৮৮৮-১৯৭০) ‘রমন প্রভাব’ আবিষ্কার করেন
চৌম্বকত্ব
বিগত প্রশ্ন
১. কোনটি চুম্বকে পরিণত করা যায়? উত্তর ইস্পাত (৩৩তম)
২. টেপ রেকর্ডার এবং কম্পিউটারের স্মৃতির ফিতায় কি ধরনের চুম্বক ব্যবহৃত হয়? উত্তর: স্থায়ী চুম্বক (২৮তম)
৩. ক্যাসেটের ফিতার শব্দ রক্ষিত থাকে কি হিসেবে? উত্তর: চুম্বক ক্ষেত্র হিসাবে (২৩তম)
-
কোন পদার্থটি চৌম্বক পদার্থ নয়? উত্তর: অ্যালুমিনিয়াম (২০তম)
৫. কোনটি চৌম্বক পদার্থ? উত্তর: উত্তর: কোবাল্ট (১৩তম)
যে সকল বস্তুর আকর্ষণ ও দিক নির্দেশক ধর্ম আছে তাদেরকে চুম্বক বলে। চুম্বকের আকর্ষণ ও বিকর্ষণী ধর্মকে এর চুম্বকত্ব বলে।
চুম্বকের সমমেরু পরস্পরর্কে বিকর্ষণ করে এবং বিপরীতমেরু পরস্পরকে আকর্ষণ করে। চুম্বক সর্বদা উত্তর ও দক্ষিণমুখী হয়ে থাকে। একটি দন্ডচুম্বককে যত টুকরাই করা হোক না কেন সর্বদা উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরু সৃষ্টি করে। উল্লেখ্য, চুম্বকত্ব চুম্বকের ভৌত ধর্ম, কোন রাসায়নিক ধর্ম নয়।
চৌম্বক পদার্থ
যে সকল পদার্থকে চুম্বক আকর্ষণ করে এবং যাদের চুম্বকে পরিণত করা যায় তাদেরকে চৌম্বক পদার্থ বলে। যেমন: লোহা, লোহার যৌগ, নিকেল, কোবাল্ট।
অচৌম্বক পদার্থ
কোন চুম্বক যে সকল পদার্থকে আকর্ষণ করে না, ঐ সকল পদার্থকে অচৌম্বক পদার্থ বলে। উদাহরণ: অ্যালুমিনিয়াম, স্টিল, সোনা ইত্যাদি।
প্রাকৃতিক চৌম্বক
প্রকৃতিতে বা খনিতে পাওয়া যায় যে চুম্বক তাকে প্রাকৃতিক চুম্বক বলে। আগে প্রাকৃতিক চুম্বককে লোডস্টোন বলা হত।
কৃত্রিম চুম্বক
মানুষের কাজের উপযোগী বিভিন্ন চুম্বক পদার্থ ব্যবহার করে পরীক্ষাগারে বিভিন্ন আকার আকৃতির যে সকল চুম্বক তৈরি করা হয় তাকে কৃত্রিম চুম্বক বলে। কৃত্রিম চুম্বক দুই প্রকার।
১. স্থায়ী চুম্বক: চুম্বক ক্ষেত্র সরিয়ে নিলেও চুম্বকত্ব লোপ পায় না।
২. অস্থায়ী চুম্বক: চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্যে আনলে চুম্বকে পরিণত হয়, চুম্বক ক্ষেত্রে সরিয়ে নিলেও চুম্বকত্ব লোপ পায়।
চৌম্বক মেরু
কোন চুম্বকের যে অঞ্চলে চুম্বকের আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বল বেশী সেই অঞ্চলকে ঐ চুম্বকের মেরু বলে।
উপমেরু
ভুল পদ্ধতিতে চুম্বকনের সময় মাঝে মাঝে দুই প্রান্তে বা মাঝখানে অতিরিক্ত মেরু সৃষ্টি হয়। এই অতিরিক্ত মেরুকে উপমেরু বলে।
চৌম্বক পোলারিটি
কোন চুম্বক পদার্থকে কোন স্থায়ী চৌম্বক ক্ষেত্রে রাখলে তা ক্ষণস্থায়ীভাবে চুম্বকে পরিণত হয় এবং এর দুপাশে চৌম্বক দ্বিমেরু বা দ্বিপোল সৃষ্টি হয়। চুম্বকের এই ধর্মকে পোলারিটি বলে।
চৌম্বক আবেশ
কোন চৌম্বক পদার্থকে কোন শক্তিশালী চুম্বকের নিকটে আনলে ঐ চুম্বক পদার্থটি সাময়িক ভাবে চুম্বকে পরিণত হয় বা অন্য কোন চৌম্বক পদার্থকে আকর্ষণ করে। এ ঘটনাকে চৌম্বক আবেশ বলে।
চৌম্বক বিভব
কোন চুম্বকের একটি একক উত্তর মেরুকে অসীম দুর থেকে চৌম্বক ক্ষেত্রের অভ্যন্তরে কোন বিন্দুতে আনতে চুম্বক বলের বিরুদ্ধে যে পরিমাণ কাজ করতে হয় তাকে চৌম্বক বিভব বলে।
চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রাবল্য
চুম্বকের ক্ষেত্রের কোন বিন্দুতে একক শক্তির একটি উত্তর মেরু স্থাপন করলে যে বল অনুভব করে তাকে ঐ ক্ষেত্রের প্রাবল্য বলে।
ডায়াম্যাগনেটিক পদার্থ
যে সকল পদার্থ খুব শক্তিশালী কোন চৌম্বকক্ষেত্রের মধ্য স্থাপন করলে ঐ সকল পদার্থে ক্ষীণ চৌম্বকত্ব দেখা যেতে পারে, তাদের ডায়াম্যাগনেটিক বলে। উদাহরণ: পানি, তামা, বিসমাথ, অ্যান্টিমনি ইত্যাদি ডায়াচৌম্বক পদার্থ।
প্যারা চৌম্বক
কোন পদার্থের উপর চৌম্বকক্ষেত্র প্রয়োগ করা হলে সামান্য পরিমাণ চুম্বকত্ব প্রদর্শন করে, তাকে প্যারা চৌম্বক পদার্থ বলে।
ফেরোচুম্বক পদার্থ
যে সকল পদার্থকে কোন চৌম্বকক্ষেত্রের মধ্য স্থাপন করলে ঐ সকল পদার্থে শক্তিশালী চৌম্বকত্ব দেখা যায়, তাদের ফেরোচুম্বক পদার্থ বলে। উদাহরণ: অ্যালুমিনিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, প্লাস্টিনাম, টিন ইত্যাদি।
কুরী বিন্দু
যে তাপমাত্রায় একটি চুম্বকের চুম্বকত্ব সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত বা নষ্ট হয়ে যায়, তাকে উক্ত চুম্বকের কুরী বিন্দু বা কুরী তাপমাত্রা বলে। যেমন: লোহার কুরী বিন্দু ৭৭০° সেঃ।
সলিনয়েড
একটি কাঁচা লোহার দন্ডকে U আকারে বাঁকিয়ে লম্বা অন্তরিত তার দ্বারা জড়িয়ে এর মধ্যদিয়ে তড়িৎ প্রবাহিত করলে তা একটি চুম্বকের ন্যায় আচরণ করে। একে সলিনয়েড বলে।
চুম্বকের ওপর তড়িৎপ্রবাহের ক্রিয়া
কোনো পরিবাহী তারের মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ পাঠালে তার চারপাশে একটি চৌম্বক ক্ষেত্রের সৃষ্টি হয়। ঐ তারের কাছে একটি চুম্বক শলাকা থাকলে শলাকাটি বিক্ষিপ্ত হয়। একে চুম্বকের ওপর তড়িৎপ্রবাহের ক্রিয়া বলে।
পৃথিবী একটি বিরাট চুম্বক
কোন দন্ড চুম্বককে ঝুলিয়ে দিলে এটি সর্বদা উত্তর দক্ষিণ বরাবর অবস্থান করে। ধারণা করা হয় পৃথিবীর অভ্যন্তরে বিশাল এক চুম্বক দন্ড অবস্থিত যার দক্ষিণ মেরু উত্তর দিকে আর উত্তর মেরু দক্ষিণ দিকে অবস্থিত। এ বিশাল চুম্বকের আর্কষণের জন্য দন্ড চুম্বকের দক্ষিণ মেরু বিশাল চুম্বকের উত্তর মেরু (দক্ষিণ দিকে) আর্কষণ করে যার ফলে দন্ড চুম্বকের দক্ষিণ মেরু দক্ষিণ দিকে ঘুরে যায়। আবার দন্ড চুম্বকের উত্তর মেরুকে বিশাল চুম্বকের দক্ষিণ মেরু (উত্তর দিকে) আর্কষণ করে ফলে দন্ড চুম্বকের উত্তর মেরু উত্তর দিকে মুখ করে। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে পৃথিবী একটি বিরাট চুম্বক, যা চুম্বকের ন্যায় আচরণ করে।
ডায়া, প্যারা ও ফেরো চুম্বকের পার্থক্য
ক। ফেরোচৌম্বক পদার্থ চুম্বক দ্বারা প্রবলভাবে আকর্ষিত হয়। কিন্তু প্যারাচৌম্বক পদার্থ দ্বারা ক্ষীণভাবে আকর্ষিত হয়। অন্যদিকে ডায়াচৌম্বক পদার্থ দ্বারা ক্ষীণভাবে বিকর্ষিত হয়।
খ। ফেরোচৌম্বক পদার্থ কেলাসিত কঠিন পদার্থ। কিন্তু প্যারাচৌম্বক ও ডায়াচৌম্বক পদার্থ কঠিন, তরল বা গ্যাসীয় হতে পারে।
গ। ফেরোচুম্বকে কুরী বিন্দু আছে অন্যদিকে প্যারা ও ডায়া চুম্বকে নেই।
ঘ। ফেরোচৌম্বক পদার্থ মুক্তভাবে ঝুলানো চৌম্বক ক্ষেত্র বরাবর অতিদ্রুত স্থাপিত হয়, কিন্তু প্যারাচৌম্বক পদার্থ স্বাভাবিকভাবে চৌম্বক ক্ষেত্র বরাবর স্থাপিত হয়। অন্যদিকে ডায়াচৌম্বক পদার্থ মুক্তভাবে ঝুলানো চৌম্বক ক্ষেত্রের সমকোণে স্থাপিত হয়।
ঙ। ফেরোচৌম্বক ও প্যারাচৌম্বক পদার্থে চৌম্বক প্রবণতা ধনাত্মক, কিন্তু তা ফেরোচৌম্বক পদার্থে উচ্চমানের ও প্যারাচৌম্বক পদার্থে নিম্নমানের হয়। আবার ডায়াচৌম্বক পদার্থে চৌম্বক প্রবণতা ঋণাত্মক ও নিম্ন মানের হয়।
চ। ফেরোচুম্বকে চৌম্বক ধারকত্ব ধর্ম আছে কিন্তু প্যারা ও ডায়া চুম্বকে নেই।
তড়িৎ চুম্বক
কাঁচা লোহার দণ্ডের উপর অন্তরিত তামার তার কুণ্ডলীর মতো জড়িয়ে ওই তারের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ পাঠালে লোহার দণ্ডটি চুম্বরে পরিণত হয়। কিন্তু এই চুম্বকের চুম্বকত্ব অস্থায়ী। তড়িৎ প্রবাহ বন্ধ করা মাত্র চুম্বকের চুম্বকত্ব নষ্ট হয়ে যায়। এই চুম্বককে তড়িৎ চুম্বক বলে।
তড়িৎ-চুম্বকে কাঁচা লোহা ব্যবহার
তড়িৎ প্রবাহ পাঠালে কাঁচা লোহা অস্থায়ী চুম্বকে পরিণত হয়। যতক্ষণ তড়িৎ প্রবাহ পাঠানো হয় ততক্ষণই কাঁচা লোহার দণ্ডটি চুম্বক থাকে। তড়িৎ প্রবাহ বন্ধ করা মাত্র ওর চুম্বকত্ব লোপ পায়। তাই তড়িৎ চুম্বকে মজ্জা রূপে কাঁচা লোহা ব্যবহার করা হয়।
চুম্বক বলরেখা
কোনো চৌম্বক ক্ষেত্রে একটি বিচ্ছিন্ন উত্তর মেরুকে মুক্তাবস্থায় স্থাপন করলে মেরুটি যে পথে পরিভ্রমণ করে তাকে চৌম্বক বলরেখা বলে।
চুম্বক বলরেখার ধর্ম
এরা উত্তর মেরু থেকে উৎপন্ন হয়ে দক্ষিণ মেরুতে শেষ হয়, এরা পরস্পরের প্রতি পার্শ্ব চাপ প্রয়োগ করে, এরা কখনও পরস্পরকে ছেদ করে না, এরা বন্ধ রেখা।
কোনো চৌম্বক পদার্থকে চুম্বকে পরিণত করার সময় পদার্থটির ভৌত অবস্থার পরিবর্তন হয় না। শুধু পদার্থটির আন্ত:আণবিক সজ্জার পরিবর্তন হয় যা তার বাহ্যিক পরিবর্তনে কোন রকম প্রভাব ফেলবে না। চুম্বকের চুম্বকত্ব একটি ভৌত ধর্ম। এটি কোন রাসায়নিক ধর্ম নয়। কোন বস্তুকে চুম্বকে পরিণত করা হলে এর কোন রাসায়নিক পরিবর্তন হয় না। সুতরাং, কোন বস্তুকে চুম্বকে পরিণত করা হলে বস্তুর কণাগুলো চুম্বকশক্তি গ্রহণ করে। ফলে বস্তুটির ভর অথবা আয়তনের কোন পরিবর্তন হয় না।
চুম্বক আকর্ষণ ও মহাকর্ষ আকর্ষণের পার্থক্য
ক। চুম্বক চৌম্বক পদার্থকে আকর্ষণ করে। মহাকর্ষ যে কোন বস্তুকে আকর্ষণ করে।
খ। চুম্বক আকর্ষণ শক্তিশালী, মহাকর্ষ আকর্ষণ দুর্বল।
গ। চুম্বক সমমেরুকে বিকর্ষণ করে, মহাকর্ষের কোন মেরু নেই।
ঘ। চুম্বক সকল বস্তুর প্রতি একই আচরণ করে। মহাকর্ষ সকল বস্তুর প্রতি একই আচরণ করে না।
আরও কিছু তথ্য
– হাতুড়ি দিয়ে কোন চুম্বক পেটালে সেটি চুম্বকত্ব হারাবে।
– তাপমাত্রা বাড়ালে চুম্বকত্ব কমবে।
– নতুন উদ্ভাবিত সব থেকে শক্তিশালী চুম্বক হচ্ছে বোরন, আয়রন, নিয়োডিমিয়াম।
– মেরু অঞ্চলে চুম্বকের আকর্ষণ ক্ষমতা সবচেয়ে বেশী।
– চুম্বকের উত্তর মেরু আসলে পৃথিবীর ভৌগোলিক দক্ষিণ মেরু।
– ক্যাসেটের ফিতার শব্দ সঞ্চিত থাকে চুম্বক শক্তি হিসেবে।
-রাডারে যে তড়িৎ চৌম্বক ভরঙ্গ ব্যবহার করা হয় তার নাম মাইক্রোওয়েভ।
– প্রাকৃতিক চুম্বককে পূর্বে লোডস্টোন বলা হতো।
– কম্পিউটারের ফিতায় এবং টেপরেকর্ডারে সিরামিক চুম্বক ব্যবহৃত হয়।
শব্দ ও তরঙ্গ
বিগত প্রশ্ন
১. কোন মাধ্যমে শব্দের গতি সর্বপেক্ষা কম? উ: বায়বীয় পদর্থে (৩০ তম বিসিএস)
২. কোন শব্দ শোনার পরে কত সেকেন্ড পর্যন্ত এর রেশ আমাদের মস্তিষ্কে থাকে? উ: ০.১ সেকেন্ড (২৮ তম বিসিএস)
৩. সর্বপেক্ষা ছোট তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের বিকিরণ হচ্ছে? উ: গামা রশি (২৭ তম বিসিএস)
৪. বাদুড় অন্ধকারে চলফেরা করে কিভাবে? উ: সৃষ্ট শব্দের প্রতিধ্বনি শুনে (২৬ তম বিসিএস)
৫. শব্দের তীব্রতা নির্ণয়ক যন্ত্র- উ: অডিওমিটার (২৭ তম বিসিএস)
৬. কোন মাধ্যমে শব্দের গতি সবচেয়ে বেশি? উ: লোহা (২৪ তম বিসিএস)
৭. লেজার রশি কে কত সালে অবিষ্কার করেন? উ: মাইম্যান, ১৯৬০ (২৪ তম বিসিএস)
৮. লোকভর্তি হল ঘরে শূন্য ঘরের চেয়ে শব্দ ক্ষীণ হয়, কারণ- উ: শূন্য ঘরে শব্দের শোষণ কম হয় (২৩ তম বিসিএস)
৯. চাঁদে কোনো শব্দ করলে তা শোনা যাবে না কেন? উ: চাঁদে বায়ুমণ্ডল নেই তাই (১৬ তম বিসিএস)
১০. আল্ট্রাসনোগ্রাফি কি? উত্তর: ছোট তরঙ্গদৈর্ঘ্যের শব্দের দ্বার ইমেজিং (১৫ তম বিসিএস)
১১. রেলওয়ে স্টেশনে আগমনরত ইঞ্জিনে বাঁশি বাজাতে থাকরে প্লাটফরমে দাঁড়ানো ব্যক্তির কাছে বাঁশির কম্পনাঙ্ক- উ: আসলের চেয়ে মান বেশি হবে (১৪ তম বিসিএস)
১২. দৃশ্যমান বর্ণালীর ক্ষুদ্রতম তরঙ্গ দৈর্ঘ্য কোন রঙের আলোর? উ: বেগুনি (১৪ তম বিসিএস)
১৩. কোন মাধ্যমে শব্দের গতি সবচেয়ে কম? উ: বায়বীয় পদার্থে (১৪ তম বিসিএস)
১৪. কিসের সাহায্যে সমুদ্রের গভীরত নির্ণয় করা হয়? উ: প্রতিধ্বনি (১৪ তম বিসিএস) ১৫. কোন মাধ্যমে শব্দের গতি সবচেয়ে বেশি? উ: লোহা (১৩ তম বিসিএস)
১৬. যে সর্বোচ্চ শ্রুতি সীমার উপরে মানুষ বধির হতে পারে তা হচ্ছে- উ: ১০৫ ডিগ্রী (১২ তম বিসিএস)
শব্দ এক প্রকার শক্তি। এই শক্তি সঞ্চালিত হয় শব্দ তরঙ্গের মাধ্যমে। শব্দ একটি অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ যা মাধ্যমের কণাগুলোর সংকোজ প্রসারণের মাধ্যমে সঞ্চালিত হয়।
-শব্দের উৎস এবং শ্রোতার মাঝে একটি জড় মাধ্যম থাকতে হবে।
-উৎসের কম্পাঙ্ক 20Hz থেকে 20,000Hz এর ভিতর থাকতে হবে।
-কোনো বস্তুর কম্পনের ফলে শব্দ তরঙ্গ সৃষ্টি হয় এবং সঞ্চালনের জন্য স্থিতিস্থাপক জড় মাধ্যমের প্রয়োজন হয়। তাই শব্দার একটি যান্ত্রিক তরঙ্গ বলা হয়।
প্রতিধ্বনি
যখন কোনো শব্দ মূল শব্দ থেকে আলাদা হয়ে মূল শব্দের পুনরাবৃত্তি করে, তখন ঐ প্রতিফলিত শব্দকে প্রতিধ্বনি বলে। সহজ কথায় প্রতিফলনের জন্য ধ্বনির পুনরাবৃত্তিকে প্রতিধ্বনি বলে।
– কোনো ক্ষণস্থায়ী শব্দ বা ধ্বনি কানে শোনার পর সেই শব্দের রেশ প্রায় ০.১ সেকেন্ড যাবৎ আমাদের মস্তিষ্কে থেকে যায়। একে শব্দানুভূতির স্থায়িত্বকাল বলে। এ ০.১ সেকেন্ডের মধ্যে অন্য শব্দ কানে এসে পৌঁছালে তা আমরা আলাদা করে শুনয়ে পাই না।
– যদি বায়ুতে শব্দের বেগ ৩৩২ মিটার/সে, ধরা হয় তাহলে ০.১ সেকেন্ডে শব্দ ৩৩.২ মি. যায়। সুতরাং প্রতিফলককে শ্রোত থেকে কমপক্ষে ৩৩.২/২= ১৬.৬ মি. দূরত্বে রাখতে হবে।
-প্রতিধ্বনির সাহায্যে খুব সহজে কূপের মধ্যে পানির উপরিতল কত গভীরে আছে তা নির্ণয় করা যায়। কূপের উপরে কোনে শব্দ উৎপন্ন করলে সেই শব্দ পানি পৃষ্ঠ থেকে প্রতিফলিত হয়ে ফিরে এলে প্রতিধ্বনি শোনা যায়।
– শব্দের প্রতিধ্বনির সাহায্যেই বাঁদুড় পথ চলে। বাঁদুড় শব্দোত্তর কম্পাঙ্কের শব্দ তৈরি করতে পারে আবার শুনতেও পারে। এই শব্দ আমরা শুনতে পাই না। বাঁদুড় শব্দোত্তর কম্পাঙ্কের শব্দ তৈরি করে সামনে ছড়িয়ে দেয়। ঐ শব্দ কোনো প্রতিবন্ধকে বায় পেয়ে আবার বাঁদুড়ের কাছে চলে আসে। ফিরে আসা শব্দ শুনে বুঝতে পারে যে সামনে কোনো বস্তু আছে কিনা। বাঁড়া এভাবে তার শিকারও ধরে। বাঁদুড় প্রায় 100,000Hz এর কম্পাঙ্কের শব্দ তৈরি করতে এবং শুনতে পারে।
শব্দের বেগের পরিবর্তন
শব্দের বেগ কয়েকটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে।
– মাধ্যমের প্রকৃতি: বিভিন্ন মাধ্যমে শব্দের বেগ বিভিন্ন। উদাহরণস্বরূপ: বায়ু, পানি এবং লোহাতে শব্দের বেগ ভিন্ন ভিন্ন। বায়ুতে শব্দের বেগ ৩৩২ মি/সে., পানিতে ১৪৫০ মি/সে., আর লোহায় ৫১৩০ মি/সে.। সাধারণভাবে বলা যায় বায়ুতে শব্দের বেগ কম, তরলে তার চেয়ে বেশি আর কঠিন পদার্থে সবচেয়ে বেশি। -তাপমাত্রা: বায়ুর তাপমাত্রা যত বাড়ে বায়ুতে শব্দের বেগও তত বাড়ে। এজন্য শীতকাল অপেক্ষা গ্রীষ্মকালে শব্দের বেগ বেশি।
-বায়ুর আর্দ্রতা: বায়ুর আর্দ্রতা বৃদ্ধি পেলে শব্দের বেগ বৃদ্ধি পায়। এজন্য শুষ্ক বায়ুর চেয়ে ভিজা বায়ুতে শব্দের বেগ বেশি।
শ্রাব্যতার সীমা ও এদের ব্যবহার
যদি কোনো বস্তু প্রতি সেকেন্ডে কমপক্ষে ২০ বার কাঁপে তবে সেই বস্তু থেকে উৎপন্ন শব্দ শোনা যাবে। এভাবে আবার কম্পন যদি প্রতি
সেকেন্ডে ২০,০০০ বার এর বেশি হয় তাহলেও শব্দ শোনা যাবে না। সুতরাং আমাদের কানে যে শব্দ শোনা যায় তার কম্পাঙ্কের সীমা হলো ২০ Hz থেকে ২০,০০০ Hz। কম্পাঙ্কের এই রেঞ্জকে শ্রাব্যতার পাল্লা বলে। যদি কম্পাঙ্ক ২০ Hz এর কম হয় তবে তাকে শব্দেতর কম্পন বলে। যদি কম্পাঙ্ক ২০,০০০Hz এর বেশি হয় তবে তাকে শব্দোত্তর কম্পন বলে।
ক। সমুদ্রের গভীরতা নির্ণয়ের জন্য SONAR নামক যন্ত্র ব্যবহৃত হয়। এর পুরো নাম Sound Navigation And Ranging। এই যন্ত্রে শব্দোত্তর কম্পাঙ্কের শব্দ প্রেরণ ও গ্রহণের ব্যবস্থা আছে।
খ। আধুনিক ওয়াশিং মেশিনের দ্বারা সহজে কাপড় পরিষ্কার করা যায়। পানির মধ্যে সাবান বা গুঁড়ো সাবান মিশ্রিত করে কাপড় ভিজিয়ে রেখে সেই পানির মধ্যে শব্দোত্তর কম্পনের শব্দ প্রেরণ করা হয়। এই শব্দ কাপড়ের ময়লাকে বাইরে বের করে আনে এবং কাপড় পরিষ্কার হয়ে যায়।
গ। মানুষের দেহের অভ্যন্তরীণ ছবি এক্স-রে দ্বারা তোলা যায়। এছাড়াও শব্দোত্তর কম্পনের শব্দের সাহায্যে ছবি তুলে রোগ নির্ণয় করা যায়। এই প্রক্রিয়ার নাম আল্ট্রাসনোগ্রাফি। শব্দকে দেহ অভ্যন্তরে প্রেরণ করা হয় এবং প্রতিফলিত শব্দ শক্তিকে আলোক শক্তিতে রূপান্তরিত করে টেলিভিশনের পর্দায় ফেলে রোগ সনাক্ত করা যায়।
ঘ। দাঁতের স্কেলিং বা পাথর তোলার জন্য শব্দোত্তর তরঙ্গ ব্যবহৃত হয়। কিডনির ছোট পাথর ভেঙে গুঁড়ো করে তা অপসারণের কাজেও ব্যবহৃত হয়।
ঙ। ধাতব পিন্ড বা পাতে সূক্ষ্মতম ফাটল অনুসন্ধানে, সূক্ষ্ম ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতি পরিষ্কার করার কাজে, ক্ষতিকর রোগ জীবাণু ধ্বংসের কাজে শব্দোত্তর তরঙ্গ ব্যবহার করা হয়।
শব্দেতর কম্পাঙ্কের ব্যবহার
– শব্দেতর কম্পনের সীমা হচ্ছে 1Hz থেকে 20Hz. হাতি এই কম্পনের মাধ্যমে নিজেদের মাঝে যোগাযোগ রক্ষা করে চলে। কোনরূপ বিকৃতি ছাড়া এই তরঙ্গ বহুদূর যেতে পারে। ভূমিকম্প এবং পারমাণবিক বিস্ফোরণের সময় এই শব্দেতর কম্পনের সৃষ্টি হয় এবং প্রবল ঝাঁকুনির মাধ্যমে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়।
শব্দ দূষণ
পারস্পরিক যোগাযোগ ও ভাব আদান-প্রদানের জন্য শব্দ প্রয়োজন। কিন্তু বিভিন্ন উৎস থেকে উৎপন্ন জোরালো এবং অপ্রয়োজনীয় ব্দ যখন মানুষের সহনশীলতার মাত্রা ছাড়িয়ে বিরক্তি ঘটায় এবং স্বাস্থ্যের ক্ষতিসাধন করে তখন তাকে শব্দ দূষণ বলে।
-অবিরাম তীব্র শব্দ মানসিক উত্তেজনা বাড়ায় ও মেজাজ খিটখিটে করে।
-শব্দ দূষণ বমি বমি ভাব, ক্ষুধা মন্দা, রক্তচাপ বৃদ্ধি, হৃদপিণ্ড ও মস্তিস্কের জটিল রোগ, অনিদ্রাজনিত অসুস্থতা, ক্লান্তি ও অবসাদগ্রন্থ হয়ে পড়া, কর্মক্ষমতা হ্রাস, স্মৃতিশক্তি হ্রাস, মাথা ঘোরা প্রভৃতি ক্ষতিকারক প্রভাব সৃষ্টি করে।
হঠাৎ তীব্র শব্দ মানুষের শ্রবণশক্তি নষ্ট করতে পারে।
পর্যাবৃত্ত গতি
কোন গতিশীল কণার গতি যদি এমন হয় যে এটি এর গতিপথের কোন নির্দিষ্ট বিন্দুকে একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর একই দিক হতে অতিক্রম করে তবে সে গতিকে পর্যাবৃত্ত গতি বলে। পর্যাবৃত্ত গতি সম্পন্ন কোন বস্তুর একটি পূর্ণ কম্পন বা পর্যায় সম্পন্ন করতে যে সময় লাগে তাকে পর্যায়কাল বলে। উদাহরণ: ঘড়ির কাঁটা, বৈদ্যুতিক পাখা, সাইকেলের চাকার গতি, সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর গতি ইত্যাদির গতি পর্যায়বৃত্ত গতির উদাহরণ। স্প্রিং এর সংকোচন ও প্রসারণের গতি রৈখিক পর্যাবৃত্ত গতি।
স্পন্দন গতি
পর্যাবৃত্ত গতি সম্পন্ন কোন বস্তুকণা যদি এর পর্যায়কালের অর্ধেক সময় একটি নির্দিষ্ট দিকে এবং বাকি অর্ধেক সময় পূর্বগতির বিপরীত দিকে চলে তবে তার সে গতিকে স্পন্দন গতি বলে। অর্থাৎ, স্পন্দন গতিকে অগ্র পশ্চাৎ পর্যাবৃত্ত গতিও বলা যেতে পারে। সরল দোলকের গতি, কম্পনশীল সুর শলাকা, গীটারের তারের গতি ইত্যাদি স্পন্দন/কম্পন গতির উদাহরণ।
তরঙ্গ
যে পর্যাবৃত্ত আন্দোলন কোন জড় মাধ্যমের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে শক্তি সঞ্চারিত করে কিন্তু মাধ্যমের কণাগুলোকে নিজ নিজ স্থান থেকে স্থায়ীভাবে স্থানান্তরিত করে না তাকে তরঙ্গ বলে।
যান্ত্রিক তরঙ্গ
কঠিন, তরল বা গ্যাসীয় মাধ্যমে যে ভরঙ্গের উদ্ভব হয় তা যান্ত্রিক তরঙ্গ। উদাহরণ: পানির তরঙ্গ, শব্দ তরঙ্গ। যান্ত্রিক তরঙ্গ সম্বালনের জন্য মাধ্যমের প্রয়োজন হয়। তাড়িত চৌম্বক তরঙ্গ সঞ্চালনের জন্য কোন মাধ্যমের প্রয়োজন পড়ে না।
তরঙ্গের বৈশিষ্ট্যসমূহ
-মাধ্যমের কণাগুলোর স্পন্দন গতির ফলে তরঙ্গ সৃষ্টি হয় কিন্তু কণাগুলোর স্থায়ী স্থানান্তর হয় না।
– যান্ত্রিক তরঙ্গ সঞ্চালনের জন্য মাধ্যম প্রয়োজন।
– তরঙ্গ একস্থান থেকে অন্যস্থানে শক্তি সঞ্চালন করে।
-তরঙ্গের বেগ মাধ্যমের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে। তরঙ্গের প্রতিফলন, প্রতিসরণ ও উপরিপাতন ঘটে।
তরঙ্গের প্রকারভেদ
তরঙ্গ দুই প্রকার। যথা: ১. অনুপ্রস্থ তরঙ্গ এবং ২. অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ m
অনুপ্রস্থ তরঙ্গ
যে তরঙ্গ কম্পনের দিকের সাথে লম্বভাবে অগ্রসর হয় তাকে অনুপ্রস্থ তরঙ্গ বলে। পানির তরঙ্গ অনুপ্রস্থ। তরঙ্গের উদাহরণ।
অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ
যে তরঙ্গ কম্পনের দিকের সাথে সমান্তরালভাবে অগ্রসর হয় তাকে অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ বলে। বায়ু মাধ্যমে। শব্দের তরঙ্গ অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গের উদাহরণ।
অনুপ্রস্থ তরঙ্গের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বিন্দুকে তরঙ্গশীর্ষ ও তরঙ্গপাদ বলে। অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গে অনুরূপ রাশি হচ্ছে সঙ্কোচন ও প্রসারণ।
কম্পাঙ্ক
প্রতি সেকেন্ডে যতগুলো পূর্ণ তরঙ্গ সৃষ্টি হয় তাকে তরঙ্গের কম্পাঙ্ক বলে। কম্পাঙ্কের একক হার্জ (Hz)। স্পন্দনশীল কোনো কণা এক সেকেন্ডে একটি পূর্ণ স্পন্দন সম্পন্ন করলে তার কম্পাঙ্ককে 1 Hz বলে। একে f’ দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
বিস্তার
সাম্যাবস্থান থেকে যে কোনো একদিকে তরঙ্গস্থিত কোন কণার সর্বাধিক সরণকে বিস্তার বলে।
দশা
কোনো একটি তরঙ্গায়িত কণার যে কোনো মুহুর্তের গতির সামগ্রিক অবস্থা প্রকাশক রাশিকে তার দশা বলে। গতির সামগ্রিক অবস্থা বলতে কণার গতির দিক, ত্বরণ, সরণ, বেগ ইত্যাদি বুঝায়। অনুপ্রস্থ তরঙ্গের ঊর্ধ্বচূড়াসমূহ বা নিম্নচূড়াসমূহ সর্বদা একই দশায় থাকে।
তরঙ্গ দৈর্ঘ্য
তরঙ্গের উপর একই দশায় আছে এমন পর পর দু’টি কণার মধ্যবর্তী দূরত্বই তরঙ্গ দৈর্ঘ্য। কম্পমান একটি বস্তুর একটি পূর্ণ কম্পনে যে সময় লাগে সেই সময়ে তরঙ্গ যতটুকু দূরত্ব অতিক্রম করে তাকে তরঙ্গদৈর্ঘ্য বলে। একে lambda (λ) দিয়ে প্রকাশ করা হয় এবং এর একক মিটার (m)।
তাপ ও তাপগতিবিদ্যা
১. এক গ্রাম পানির তাপমাত্রা ২০০ হতে ৩০° সেলসিয়াসে বৃদ্ধির জন্য কত তাপের প্রয়োজন? উ: ১০ ক্যালরি (২৮তম বিসিএস) ২. ফারেনহাইট ও সেলসিয়াসের স্কেলে কত ডিগ্রি তাপ মাত্রায় সমান তাপমাত্রা নির্দেশ করে? উ: 80° (২৩তম বিসিএস)
৩. তাপ প্রয়োগে সবচেয়ে বেশি প্রসারি হয় কোন পদার্থ? উ: বায়বীয় পদার্থ (২৩তম বিসিএস)
৪. মাটির পাত্রে পানি ঠান্ডা থাকে কেন? উ: মাটির পাত্র পানির বাষ্পীয়ভবনে সাহায্য করে (২৩ তম বিসিএস)
৫. আকাশ মেঘলা থাকলে গরম বেশি লাগে কেন? উ: মেঘ পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে বিকীর্ণ তাপকে ওপরে যেতে বাধা দেয় বলে (২৩ তম বিসিএস )
৬. কোন রঙের কাপে চা তাড়াতাড়ি ঠান্ডা হয়? উত্তর: কালো (১৪ তম বিসিএস )
৭. রান্না করার হাড়ি পাতিল সাধারণত অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি হয়। তার প্রধান কারণ- উ: এতে দ্রুত তাপ সঞ্চারিত হয়ে খাদ্যদ্রব্য তাড়াতাড়ি সিদ্ধ হয় ১২ তম বিসিএস
-তাপ এক প্রকার শক্তি যা ঠান্ডা বা গরমের অনুভূতি জাগায়। তাপমাত্রা হচ্ছে বস্তুর তাপীয় অবস্থা যা অন্য বস্তুর তাপীয় সংস্পর্শে আনলে বস্তুটি তাপ গ্রহণ করবে না বর্জন করবে তা নির্ধারণ করে।
-১ গ্রাম পানির তাপমাত্রা ১০ সেলসিয়াস বৃদ্ধির জন্য যে তাপের প্রয়োজন হয় তাকে ১ ক্যালরি বলে। ১ ক্যালরি = ৪.২ জুল (৪.১৮)।
-০° সেলসিয়াস বা ২৭৩ কেলভিন তাপমাত্রাকে বলা হয়- প্রমাণ তাপমাত্রা।
-৭৬০ মিমি চাপ বা ৭৬ সেমি চাপকে বলা হয়- প্রমাণ চাপ।
– ২৭৩° সেলসিয়াস বা ০ কেলভিন তাপমাত্রাকে বলে- পরম শূন্য তাপমাত্রা। পরম শূন্য তাপমাত্রায় গ্যাসের আয়তন- শূন্য।
-ক্লিনিক্যাল থার্মোমিটারে দাগ কাটা থাকে ৯৫০ থেকে ১১০০ ফারেনহাইট পর্যন্ত।
– মানব দেহের স্বাভাবিক উষ্ণতা বা তাপমাত্রা হলো ৯৮.৪°F বা ৩৬.৯°C।
– তাপ প্রয়োগে পদার্থের প্রসারণ ক্রম: বায়বীয় > তরল > কঠিন।
– হারিকেনের গরম চিমনির উপর ঠান্ডা পানি পড়লে তা ফেটে যায়। কারণ কাঁচের কিছু অংশে অসম আয়তন সংকোচন।
-পানির ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি ৪° সে. তাপমাত্রায়।
– তারকাসমূহের তাপমাত্রা নির্ণয়ে ব্যবহৃত হয়- পাইরোমিটার।
– বাতাসের তাপমাত্রা কমে গেলে আর্দ্রতা- কমে যায়।
বস্তুর উপর তাপ ও চাপের প্রভাব
-চাপ প্রয়োগের ফলে কঠিন বস্তুর গলে যাওয়া এবং চাপ প্রত্যাহারে আবার কঠিন অবস্থা প্রাপ্ত হওয়াকে বলে- পুনঃশীতলীকরণ।
-চাপে বরফের গলনাংক- কমে যায়।
– চাপ বাড়লে তরলের স্ফুটনাংক- বেড়ে যায়। – চাপ কমলে স্ফুটনাংক- কমে।
– পৃথিবীর পৃষ্ঠ হতে যত উপরে উঠা যায় তত বায়ুর চাপ- কমতে থাকে।
– সাধারণ পাম্পে পানিকে যে উচ্চতার অধিক উঠানো যায় না-৩৪ ফুট।
– কাঁচের ধাতব পাত সংযুক্ত প্লাটিনাম ব্যবহার করা হয় কারণ- কাঁচ ও প্লাটিনামের প্রসারাংক প্রায় সমান।
-পদার্থের গলনাংক নির্ভর করে- চাপের হ্রাস বৃদ্ধির উপর।
– শীতকালে নারকেলের তেল জমার কারণ- ভেলের স্বাভাবিক তাপমাত্রা গলনাংকের নিচে নেমে যায়।
– দুটি ঘরের তাপমাত্রা সমান কিন্তু আপেক্ষিক আর্দ্রতা যথাক্রমে ৫০% এবং ৭৫% হলে তুলনামূলকভাবে আরামদায়ক হবে প্রথম ঘরটি।
-এভারেস্ট পর্বত শৃঙ্গে পানি ফুটতে শুরু করে যে তাপমাত্রায় ৭০° সেন্টিগ্রেডে।
-আকস্মিক তাপমাত্রা হ্রাসের ফলে বাষ্প জমাট বেঁধে তৈরি হয়- তুহিন।
– ঠান্ডা ও গরম পানির মধ্যে তাড়াতাড়ি আগুন নেভাতে সাহায্য করে- গরম পানি।
ক্যালরিমিতি
-কোন বস্তুর এক গ্রাম ভরের তাপমাত্রা ১ কেলভিন বাড়াতে যে তাপের প্রয়োজন হয় তাকে বলে- ঐ বস্তুর উপাদানের আপেক্ষিক তাপ।
-কোন বস্তুর অন্তর্নিহিত তাপশক্তির পরিমাণ নির্ভর করে- বস্তুটির ভর, উপাদান এবং তাপমাত্রার উপর।
-স্থলভাগের তুলনায় সামুদ্রিক অঞ্চলের তাপমাত্রা অনেক ধীরে ধীরে বৃদ্ধি হ্রাস পায় কারণ- পানির আপেক্ষিক তাপ মাটির চেয়ে বেশি।
-রাতে স্থলভাগ থেকে জলভাগের দিকে বায়ু প্রবাহিত হয় কারণ- সমুদ্রের পানির আপেক্ষিক তাপ বেশি বলে তা আস্তে আয়ে ঠান্ডা হয়।
-পানির আপেক্ষিক তাপ মাটির আপেক্ষিক তাপের চেয়ে- পাঁচ গুণেরও বেশি।
তাপ সঞ্চলন
– তাপ সঞ্চালনের পদ্ধতি- তিনটি। যথা: পরিবহন, পরিচলন এবং বিকিরণ।
– তাপের পরিবহনের জন্য প্রয়োজন- জড় মাধ্যম।
-তাপের পরিবাহকত্বের মান নির্ভরশীল- পরিবাহকের উপাদানের উপর।
– স্বচ্ছ বস্তুর মধ্য দিয়ে হয় তাপের বিকিরণ।
– তাপরোধী পদার্থ- মেঘ।
– তাপ বিকিরণ ও শোষণ করার ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি- কালো বস্তুর।
-তাপ বিকিরণ ও শোষণ করার ক্ষমতা সবচেয়ে কম- সাদা রঙের বস্তুর।
-পালিশ করা পৃষ্ঠের তাপ বিকিরণ করার ক্ষমতা- কম
– যে সব পদার্থের মধ্যে দিয়ে তাপ সহজে পরিবাহিত হতে পারে তাদেরকে বলে- সুপরিবাহী পদার্থ।
-সুপরিবাহী পদার্থের উদাহরণ- লোহা, তামা, অ্যালুমিনিয়াম।
– যে সব পদার্থের মধ্যে দিয়ে তাপ সহজে পরিবাহিত হতে পারে না তাদেরকে বলে- কুপরিবাহী পদার্থ।
-কুপরিবাহী পদার্থের উদাহরণ- তুলা, কাচ, পশম।
-যে সব বস্তু আপতিত বিকীর্ণ তাপ প্রায় শোষণ করে তাদেরকে বলে- আদর্শ কালো বস্তু। যেমন: ভূসা কয়লা, কালে প্লাটিনাম।
– ভূসা কয়লা প্রায় ৯৫% এবং কালো প্লাটিনাম প্রায় ৯৮% বিকীর্ণ তাপ শোষণ করে।
-পুকুরের উপরের পানি ঠান্ডা এবং নিচের গরম মনে হয়- শীতকালে।
তাপীয় যন্ত্র
-যে যন্ত্র তাপশক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে তাকে বলে- তাপ ইঞ্জিন।
-তাপ ইঞ্জিনের উদাহরণ- পেট্রোল ইঞ্জিন, ডিজেল ইঞ্জিন, গ্যাস ইঞ্জিন।
-তাপীয় ইঞ্জিন- দুই প্রকার। যথা: অন্তর্দহ ও বহির্দহ
-যে ইঞ্জিনে জ্বালানির দহন ক্রিয়া ইঞ্জিনের মূল অংশের বাইরে ঘটে, তাকে বলে- বহির্দহ ইঞ্জিন।
-যে ইঞ্জিনে জ্বালানির দহন ক্রিয়া ইঞ্জিনের মূল অংশের ভিতরে ঘটে তাকে বলে- অন্তর্দহ ইঞ্জিন।
-অ্যারোপ্লেনের ইঞ্জিন- অন্তর্দহ ইঞ্জিনের উদাহরণ।
-সর্বপ্রথম পেট্রোল ইঞ্জিন আবিষ্কার করেন- ড. অটো, ১৮৮৬ সালে।
-পেট্রোল ইঞ্জিনের দক্ষতা- প্রায় ৩০%।
-ফ্রেয়ন এক প্রকার রাসায়নিক পদার্থ, যার রাসায়নিক নাম ডাইক্লোরো ডাইফ্লোরো মিথেন। ফ্রেয়নের বাণিজ্যিক নাম- F- 22 -ইঞ্জিনের কার্বুরেটরের কাজ- পেট্রোলকে বাষ্পে পরিণত করা।
-চতুর্থাত ইঞ্জিনের উদাহরণ- পেট্রোল ইঞ্জিন। -সর্বাপেক্ষা বেশি দক্ষতাসম্পন্ন ইঞ্জিন- বৈদ্যুতিক মোটর।
আলোর প্রকৃতি
বিগত প্রশ্ন
১. এক গ্রাম পানির তাপমাত্রা ২০০ হতে ৩০° সেলসিয়াসে বৃদ্ধির জন্য কত তাপের প্রয়োজন? উ: ১০ ক্যালরি (২৮তম বিসিএস)
২. অপটিক্যাল ফাইবারে আলোর কোন ঘটনাটি ঘটে? উ: অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন (৩২তম বিসিএস)
৩. হীরক উজ্জল দেখায় কেন? উ: পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলনের জন্য (৩১তম বিসিএস)
৪. কোন আলোক তরঙ্গ মানব চোখে দেখতে পাওয়া যায়? উ: ৪০০ থেকে ৭০০ নে. মি. (nm) (৩১ তম বিসিএস)
৫. চাঁদ দিগন্তের কাছে অনেক বড় দেখায় কেন? উত্তর: বায়ুমন্ডলীয় প্রতিসরণে (২৯তম বিসিএস)
৬. লাল আলোতে নীল রঙের বস্তু কেমন দেখায়? উ: কালো (২৯তম বিসিএস)
৭. যে মসৃণ তলে আলোর নিয়মিত প্রতিফলন ঘটে তাকে কী বলে? উ: দর্পণ (২০তম বিসিএস)
০৮. সূর্য থেকে পৃথিবীতে আলো আসতে কতক্ষণ সময় লাগে? উ: ৮.৩২ মিনিট (১৮তম বিসিএস)
০৯. আকাশ নীল দেখায় কেন? উ: নীল সমুদ্রের প্রতিফলনের ফলে (১৫তম বিসিএস)
১০. সিনেমাস্কোপ প্রজেক্টারে কোন ধরনের লেন্স ব্যবহৃত হয়? উ: অবতল (১৩তম বিসিএস)
১১. যে তিনটি মুখ্য বর্ণের সমন্বয়ে অন্যান্য বর্ণ সৃষ্টি করা যায় সেগুলো হলো- উ: লাল, নীল, সবুজ (১০ তম বিসিএস)
১২. রংধনু সৃষ্টির বেলায় পানির কণাগুলো উ: প্রিজমের কাজ করে (১১ তম বিসিএস)
১৩. পানিতে নৌকার বৈঠা বাঁকা দেখা যাওয়ার কারণ, আলোর- উ: প্রতিসরণ (১২ তম বিসিএস)
আলো এক প্রকার শক্তি যার মাধ্যমে আমরা দেখতে পাই। চোখে প্রবিষ্ট আলো চোখের রেটিনায় বস্তুটির প্রতিবিম্ব সৃষ্টি করে এবং জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমাদের মস্তিষ্ক বস্তুটির অনুরূপ একটি বস্তুর অনুভূতি সৃষ্টি করে। আলোর প্রধান ধর্মগুলো নিম্নরূপ:
– কোন স্বচ্ছ সমসত্ব মাধ্যমে সরল পথে চলে -কোন নির্দিষ্ট মাধ্যমে আলো একটি নির্দিষ্ট বেগে চলে
– আলোর প্রতিফলন, প্রতিসরণ, ব্যতিচার, অপবর্তন, বিচ্ছুরণ এবং সমবর্তন ঘটে। • -আলো কণা এবং তরঙ্গ উভয়ের ন্যায় আচরণ করে।
আলোর প্রতিফলন
আলোকরশ্মি যখন এক মাধ্যম দিয়ে চলতে চলতে অন্য এক মাধ্যমের কোনো তলে আপতিত হয় তখন দুই মাধ্যমের বিভেদতল হতে কিছু পরিমাণ আলোকরশ্মি প্রতিফলিত হয়ে আবার প্রথম মাধ্যমে ফিরে আসে তাকে আলোর প্রতিফলন বলে। প্রতিফলক পৃষ্ঠের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে প্রতিফলনকে দুইভাগে ভাগ করা যায়।
১. নিয়মিত বা সুষম প্রতিফলন
২. ব্যাপ্ত বা অনিয়মিত প্রতিফলন নিয়মিত প্রতিফলন
তত্ত্ব প্রবক্তা
কণাতত্ত্ব- স্যার আইজ্যাক নিউটন
তরঙ্গ তত্ত্ব- হাইগেন
কোয়ান্টাম তত্ত্ব- ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক
তাড়িত চৌ, তত্ত্ব- ম্যাক্সওয়েল
প্রতিফলনের সূত্র
প্রথম সূত্র আপতিত রশ্মি, প্রতিফলিত রশ্মি এবং আপতন বিন্দুতে প্রতিফলকের উপর অঙ্কিত অভিলম্ব একই সমতলে অবস্থান করে।
দ্বিতীয় সূত্র : প্রতিফলন কোণ আপতন কোণের সমান হয়।
দর্পণ
দর্পণ হল এমন একটি মসৃণ তল যেখানে আলোর নিয়মিত প্রতিফলন ঘটে। একটি মসৃণ তলে প্রতিফলক আস্তরণ (সিলভারের প্রলেগ দেয়া হয়) দিয়ে দর্পণ প্রস্তুত করা হয়। দর্পণ মূলত দুই প্রকার।
১. সমতল দর্পণ প্রতিফলক পৃষ্ঠ মসৃণ এবং সমতল
২. গোলীয় দর্পণ : প্রতিফলক পৃষ্ঠ মসৃণ এবং গোলীয় হয়। গোলীয় দর্পণ আবার দুই প্রকার। যথা: ক. উত্তল দর্পণ
খ. অবতল দর্পণ
প্রতিবিম্ব
কোন বিন্দু হতে নির্গত আলোকরশ্মিগুচ্ছ কোন তলে প্রতিফলিত হবার পর দ্বিতীয় কোন বিন্দুতে মিলিত হয় বা দ্বিতীয় কোন বিন্দু হয়ে অপসারিত হচ্ছে বলে মনে হয়, তখন ঐ দ্বিতীয় বিন্দুকে প্রথম বিন্দুর প্রতিবিম্ব বলে। একটি বস্তু হল অসংখ্য বিন্দুর সমষ্টি। প্রতিবিং দুই প্রকার হয়।
যথা: ক. বাস্তব প্রতিবিম্ব
খ. অবাস্তব প্রতিবিম্ব
সমতল দর্পণে গঠিত প্রতিবিম্বের বৈশিষ্ট্য
সমতল দর্পণ থেকে বস্তুর দূরত্ব যত, দর্পণ থেকে প্রতিবিম্বের দূরত্বও তত। প্রতিবিম্বের আকার লক্ষ্যবস্তুর আকারের সমান। প্রতিবিং অবাস্তব এবং সোজা।
গোলীয় দর্পণে সৃষ্ট প্রতিবিম্বের বৈশিষ্ট্য
লক্ষ্যবস্তুর অবস্থানের উপর ভিত্তি করে অবতল দর্পণে সৃষ্ট প্রতিবিম্বের বৈশিষ্ট্য বিভিন্ন রকম হতে পারে। অবতল দর্পণে বিম্ব বাস্তব, অবাস্তব, উল্টা, সোজা, খর্বিত বিবর্ধিত হতে পারে। উত্তল দর্পণে অবাস্তব, সোজা এবং আকারে লক্ষ্যবস্তুর চেয়ে ছোট হয়।
সমতল দর্পণের ব্যবহার
১. সমতল দর্পণের সাহায্যে আমরা আমাদের চেহারা দেখি।
২. ডাক্তারগণ রোগীর দৃষ্টি শক্তি পরীক্ষা করার জন্য বর্ণমালা পাঠের সুবিধার্থে সমতল দর্পণ ব্যবহার করে
৩. সমতল দর্পণ ব্যবহার করে পেরিস্কোপ তৈরি করা হয়।
৪. পাহাড়ি রাস্তার বাঁকে দুর্ঘটনা এড়াতে এটি ব্যবহার করা হয়।
৫. বিভিন্ন আলোকীয় যন্ত্রপাতি যেমন- টেলিস্কোপ, ওভারহেড প্রজেক্টর, লেজার তৈরি করতে সমতল দর্পণ ব্যবহার করা হয়। ৬. নাটক, চলচ্চিত্র ইত্যাদির শ্যুটিং এর সময় সমতল দর্পণ দিয়ে আলো প্রতিফলিত করে কোনো স্থানের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি করা হয়।
অবতল দর্পণের ব্যবহার
১. দন্ত চিকিৎসায়।
২. রূপচর্চায় এবং দাঁড়ি কাটার সময়।
৩. প্রতিফলক হিসেবে টর্চ লাইট, স্টিমার বা লঞ্চের সার্চ লাইটে অবতল দর্পণ ব্যবহার করা হয়।
উত্তল দর্পণের ব্যবহার
১. গাড়িতে এবং বিয়ের সময় ভিউ মিরর হিসেবে।
২. প্রতিফলক টেলিস্কোপ তৈরিতে।
৩. রাস্তার বাতিতে প্রতিফলক হিসেবে।
বিবর্ধন
প্রতিবিম্বের দৈর্য্য এবং লক্ষ্যবস্তুর দৈর্ঘ্যের অনুপাতকে বিবর্ধন বলে। এর মাধ্যমে প্রতিবিম্ব লক্ষ্যবস্তুর তুলনায় কতগুণ বড় বা ছোট তা জানতে পারি।
স্থির তড়িৎ
বিসিএস পরীক্ষায় বিগত প্রশ্ন
১. বাসা বাড়িতে সরবারাহকৃত বিদ্যুতের ফ্রিকোয়েন্সি হলো- উ: ৫০ হার্জ
২. বৈদ্যুতিক মিটারের এক ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ বলতে বুঝায়- উ: এক কিলোওয়াট-ঘণ্টা
৩. আকাশে বিদ্যুৎ চমকায়- উ: মেঘের অসংখ্য জল কণা/বরফ কণার মধ্যে চার্জ সঞ্চিত হলে
৪. বৈদ্যুতিক পাখা ধীরে ধীরে ঘুরলে বিদ্যুৎ খরচ- উ: একই হয়
৫. বৈদ্যুতিক বাল্বের ফিলামেন্ট কি ধাতু দিয়ে তৈরি? উ: টাংস্টেন
৬. বিদ্যুৎ বিলের হিসাব কি ভাবে করা হয়? উ: কিলোওয়াট ঘণ্টায়
৭. আকাশে বিজলী চমকায়- উ: মেঘের অসংখ্য পানি ও বরফ কণার মধ্যে চার্জ সঞ্চিত হলে
৮. বিদ্যুবাহী তারে পাখি বসলে সাধারণত বিদ্যুৎপৃষ্ঠ হয় না। কারণ- উ: মাটির সংঙ্গে সংযোগ হয় না
৯. বৈদ্যুতিক ইস্ত্রি এবং হিটারে ব্যবহৃত হয়- উ: নাইক্রোম তার
১০. আবাসিক বাড়ির বর্তনীতে সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার করা হয়- উ: অতিমাত্রায় বিদ্যুৎ প্রবাহজনিত দুর্ঘটনা রোধের উদ্দেশ্যে
১১. বিদ্যুৎকে সাধারণ মানুষের কাজে লাগানোর জন্য কোন বৈজ্ঞানিকের অবদান সবচেয়ে বেশি? উ: টমাস এডিসন
১২. বাংলাদেশে তড়িৎ-এর কম্পঙ্ক (frequency) প্রতি সেকেন্ডে
১৩ সাইকেল-এর তাৎপর্য কি? উ: প্রতি সেকেন্ডে বিদ্যুৎ প্রবাহ ৫০ বার উঠানামা করে
১৪. আকাশে বিজলী চমকায়- উ: মেঘের অসংখ্য পানি ও বরফ কণার মধ্যে চার্জ সঞ্চিত হলে
পদার্থ সৃষ্টিকারী মৌলিক কণাসমূহের (ইলেকট্রন এবং প্রোটন) মৌলিক এবং বৈশিষ্ট্যমূলক ধর্মই আধান বা চার্জ। ইলেকট্রনের আধানকে ঋণাত্মক এবং প্রোটনের আধানকে ধনাত্মক ধরা হয়। একটি চার্জহীন বা নিরপেক্ষ পদার্থের পরমাণুতে ইলেকট্রন এবং প্রোটনের সংখ্যা সমান থাকে, চার্জযুক্ত পদার্থে ইলেকট্রন সংখ্যা সমান থাকে না।
ঘর্ষণে আহিতকরণ
দুটি বস্তুর পারস্পারিক ঘর্ষণের ফলে আধানের উদ্ভব হয়। বিভিন্ন বস্তুর ইলেকট্রন আসক্তি বিভিন্ন রকম। তাই দুটি বস্তুকে যখন পরস্পরের সংস্পর্শে আনা হয় তখন যে বস্তুর ইলেকট্রন আসক্তি বেশি সে বস্তু অপর বস্তুটি থেকে ইলেকট্রন সংগ্রহ করে ঋণাত্মক আধানে পরিণত হয়। কাঁচদণ্ডকে সিল্ক দ্বারা ঘষলে কাঁচ থেকে ইলেকট্রন সিল্কে চলে যায় কারণ সিল্কের ইলেকট্রন আসক্তি কাঁচের থেকে বেশি। ফ্লানেলের কাপড়ের সাথে ইবোনাইট বা পলিথিন দণ্ড ঘষলে ইবোনাইট বা পলিথিন দণ্ড ঋণাত্মক আধানে আহিত হয়।
তড়িৎ আবেশ
আহিত বস্তুকে অনাহিত বস্তুর সংস্পর্শে আনলে অনাহিত বস্তুটি আহিত হয়। তড়িৎ আবেশের জন্য এমন হয়। একটি আহিত বস্তুর কাছে এনে স্পর্শ না করে শুধুমাত্র এর উপস্থিতিতে কোন অনাহিত বস্তুকে আহিত করার পদ্ধতিকে তড়িৎ আবেশ বলে।
-আবেশী আধান: যে আধান আবেশ তৈরি করে তাকে আবেশী আধান বলে।
-আবিষ্ট আধান: পরিবাহিতে যে আধানের সঞ্চার হয় তাকে আবিষ্ট আধান বলে।
তড়িৎবীক্ষণ যন্ত্র
যে যন্ত্রের সাহায্যে কোনো বস্তুতে আধানের অস্তিত্ব ও প্রকৃতি নির্ণয় করা যায় তাকে তড়িৎবীক্ষণ যন্ত্র বলে।
তড়িৎ বল
দুটি বিপরীত জাতীয় আধান পরস্পরকে আকর্ষণ করে, দুটি সমজাতীয় আধান পরস্পরকে বিকর্ষণ করে। দুটি আধানের মধ্যবর্তী আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বলের মান নির্ভর করে,
১. আধান দুটির পরিমাণের উপর
২. আধান দুটির মধ্যবর্তী দূরত্বের উপর
৩. আধান দুটি যে মাধ্যমে অবস্থিত তাঁর প্রকৃতির উপর
কুলম্বের সূত্র
আধান দুটির আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বল সম্পর্কে বিজ্ঞানী কুলম্ব একটি সূত্র বিবৃত করেন। এঁকে কুলম্বের সূত্র বলে। “নির্দিষ্ট মাধ্যমে দুটি বিন্দু আধানের মধ্যে ক্রিয়াশীল আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বলের মান আধানদ্বয়ের গুণফলের সমানুপাতিক, মধ্যবর্তী দূরত্বের বর্গের। ব্যস্তানুপাতিক এবং এই বল এদের সংযোজক সরলরেখা বরাবর ক্রিয়া করে”।
তড়িৎ ক্ষেত্র
আহিত বস্তুর চারিদিকে যে অঞ্চল জুড়ে তড়িৎ বলের প্রভাব বিদ্যমান থাকে সেই অঞ্চলকে ঐ বস্তুটির তড়িৎক্ষেত্র বলে।
তড়িৎক্ষেত্রের তীব্রতা
তড়িৎক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে একটি একক ধনাত্মক আধান স্থাপন করলে সেটি যে বল অনুভব করে তাকে ঐ বিন্দুর তড়িৎ তীব্রর বলে।
তড়িৎ বলরেখা
তড়িৎক্ষেত্রে একটি মুক্ত ধনাত্মক আধান স্থাপন করলে এটি যে পথে পরিভ্রমণ করে তাকে তড়িৎ বলরেখা বলে। বলরেখার বাস্তব কোনো অস্তিত্ব নেই। এই রেখাগুলো কাল্পনিক।
স্থির তড়িতের ব্যবহার
১) রং স্প্রেতে
২) ইংকজেট প্রিন্টারে
৩) ফটোকপিয়ারে
চল তড়িৎ
দুটি অসম বিভবের বস্তুকে তার দ্বারা সংযুক্ত করলে এদের মাঝে তড়িৎপ্রবাহের সৃষ্টি হয়। কোন পরিবাহীর যে কোন প্রস্থচ্ছেদের মধ্য দিয়ে একক সময়ে যে পরিমাণ আধান প্রবাহিত হয় তাকে তড়িৎ প্রবাহ বলে। কোন পরিবাহীর যে কোন প্রস্থচ্ছেদের মধ্য দিয়ে। সময়ে যদি পরিমাণ আধান প্রবাহিত হয় তাহলে তড়িৎপ্রবাহ। হবে,
– তড়িৎপ্রবাহের একক অ্যাম্পিয়ার (A)
তড়িৎ প্রবাহের দিক এবং ইলেকট্রন প্রবাহের দিক
প্রথমে মনে করা হত ধনাত্মক আধানের প্রবাহের ফলে তড়িৎপ্রবাহের সৃষ্টি হয়। ধনাত্মক আধান উচ্চ বিভব থেকে নিম্ন বিভবে যায়। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায় ইলেকট্রনের প্রবাহের কারণে তড়িৎপ্রবাহ সৃষ্টি হয়। ইলেকট্রন নিম্ন বিভব থেকে উচ্চ বিভবে যায়।
পরিবাহী, অপরিবাহী এবং অর্ধপরিবাহী
তড়িৎপরিবাহিতার উপর ভিত্তি করে কঠিন পদার্থকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
পরিবাহী
যে সকল পদার্থের ভিতর দিয়ে খুব সহজে তড়িৎপ্রবাহ চলতে পারে তাদেরকে পরিবাহী বলে। উদাহরণ: তামা, রুপা, অ্যালুমিনিয়াম।
অপরিবাহী
যে সকল পদার্থের ভিতর দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ চলতে পারে না তাদেরকে অপরিবাহী বা অন্তরক পদার্থ বলে। উদাহরণ: প্ল্যাস্টিক, রাবার, কাঁচ, চিনামাটি।
অর্ধপরিবাহী
যে সকল পদার্থের পরিবহণ ক্ষমতা সাধারণ তাপমাত্রায় পরিবাহী এবং অপরিবাহী পদার্থের মাঝামাঝি তাদেরকে অর্ধপরিবাহী বলে। উদাহরণ: জার্মেনিয়াম, সিলিকন, গ্যালিয়াম, আর্সেনাইড ইত্যাদি।
বিভব পার্থক্য এবং তড়িৎ প্রবাহের মধ্যে সম্পর্ক
ও’মের সূত্র
তাপমাত্রা স্থির থাকলে কোন পরিবাহীর মধ্য দিয়ে যে পরিমাণ তড়িৎপ্রবাহ চলে তা ঐ পরিবাহীর দুই প্রান্তের বিভব পার্থক্যের সমানুপাতিক’।
-রোধের একক ওহম
তড়িচ্চালক শক্তি এবং বিভব পার্থক্য
তড়িচ্চালক শক্তি
কোন বর্তনীতে তড়িৎপ্রবাহ চালনা করার জন্য তড়িৎশক্তির প্রয়োজন হয়। কোন তড়িৎ উৎস একক ধনাত্মক আধানকে বর্তনীর এক বিন্দু থেকে উৎসসহ সম্পূর্ণ বর্তনী ঘুরিয়ে ঐ বিন্দুতে আনতে যে পরিমাণ কাজ সম্পন্ন হয় তাকে ঐ উৎসের তড়িচ্চালক শক্তি বলে। একক ধনাত্মক আধানকে বর্তনীর এক বিন্দু থেকে অপর বিন্দুতে স্থানান্তর করতে যে পরিমাণ কাজ সম্পন্ন হয় তাকে ঐ দুই বিন্দুর বিভব পার্থক্য বলে।
রোধের নির্ভরশীলতা
কোনো পরিবাহকের রোধ চারটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। যথা:
ক. পরিবাহকের দৈর্ঘ্য
খ. পরিবাহকের প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল
গ. পরিবাহকের উপাদান
ঘ. পরিবাহকের তাপমাত্রা
আপেক্ষিক রোধ এবং পরিবাহকত্ব
আপেক্ষিক রোধ
কোন নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় একক দৈর্ঘ্য ও একক প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল বিশিষ্ট কোন পরিবাহীর রোধকে ঐ তাপমাত্রায় এর উপাদানের আপেক্ষিক রোধ বলে। একে দ্বারা সূচিত করা হয়। নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় কোনো পরিবাহীর রোধ এর ভৌত অবস্থার (যেমন দৈর্ঘ্য, প্রস্থচ্ছেদের ইত্যাদি।) উপর নির্ভর করে। কিন্তু এর আপেক্ষিক রোধ শুধুমাত্র এর উপাদানের উপর নির্ভরশীল।
লোডশেডিং
বিদ্যুৎ সরবরাহের তুলনায় চাহিদা বেশি হলে কর্তৃপক্ষ এ ব্যবস্থা নেয়। বিদ্যুৎ উৎপাদন উপকেন্দ্র দ্বারা লোডশেডিং চালিত হয়। লোডশেডিং চক্রাকারে বিভিন্ন এলাকায় হয়ে থাকে।
তড়িতের নিরাপদ ও কার্যকর ব্যবহার
তড়িৎশক্তির ব্যবহার নিম্নবর্ণিত তিনটি কারণে বিপজ্জনক হতে পারে।
ক. অন্তরকের ক্ষতিসাধন
খ. ক্যাবলের অতি উত্তপ্ত হওয়া
গ. আর্দ্র অবস্থা
বাড়িতে তড়িৎ ব্যবহারের সময় নিম্নবর্ণিত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন ক. সার্কিট ব্রেকার
খ. ফিউজ
গ. ভূ-সংযোগ তার
ঘ. সুইচের সঠিক সংযোগ