স্বাস্থ্য ভাল রাখার জন্য এই নিয়মগুলো মেনে চলুন
আবহাওয়া বদলের এই সময়ে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বেশ কমে যায়। ফলে ঠাণ্ডা লাগা, হাঁচি, জ্বর, সর্দি, গায়ে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট প্রভৃতি দেখা দিতে পারে। তবে কিছু বিষয় মেনে চললে এই শীতকালে আপনিও থাকতে পারেন ফিট। শীতে শরীর সুস্থ রাখতে যা করতে পারেন।
১. নিয়ম করে হাঁটুনঃ
সকালের নরম রোদ ওঠার পর অথবা বিকেলের দিকে হাঁটতে কিংবা জগিং করতে পারেন। নিয়মিত শীতের সময় সক্রিয় এবং উষ্ণ থাকাটা খুব জরুরি। এ ক্ষেত্রে ব্যায়াম উষ্ণ থাকতে সাহায্য করার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধক্ষমতাও বাড়ায়। শীতে হাঁটা এবং দৌড়ানো হলো বাইরের ব্যায়ামগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সহজ। ফিটনেস লেভেল বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাঁটার গতিও বাড়িয়ে দিন। যতক্ষণ পর্যন্ত না জগিং করার সক্ষমতা অর্জন করছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত হাঁটার গতি বাড়াতে থাকুন। এরপর চাইলে দৌড়ান বা জগিং করুন। খেয়াল রাখবেন, হাঁটার রাস্তাটি যেন নিরাপদ হয়।
২. ভালো ঘুমঃ
স্বাস্থ্যের জন্য পুষ্টি ও ব্যায়ামের মতোই গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ঘুম। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন সাত-আট ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন হয়। দীর্ঘ সময় ধরে আরামদায়ক ঘুমানোর জন্য শীতের সময়টা বেশ সহায়ক। পর্যাপ্ত ঘুম শরীরকে ঠাণ্ডার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে এবং শীতকালে সারা দিন সতেজ রাখে। এটি শরীরের ইমিউন সিস্টেম কার্যকর রাখা, স্ট্রেস হরমোন দূর করাসহ আরো অনেক কাজে সহায়তা করে। এ জন্য ঘুমের সময়সূচি ঠিক রাখুন। বিছানায় যাওয়ার জন্য একটি নির্ধারিত সময় ঠিক করুন। অযথায় রাত জাগবেন না। ঘুমানোর এক ঘণ্টা আগে ফোনটি রেখে দিন।
৩. যথাযথ পোশাক পরুনঃ
শীতে কী ধরনের পোশাক পরছেন, তা নিশ্চিত করুন। শীত থেকে রক্ষার জন্য সুতির তৈরি আরামদায়ক পোশাক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
৪. রোদ পোহানঃ
ভিটামিন ‘ডি’র প্রধান উৎস হলো রোদ। শীতের সময় রোদ পোহালে ভালো থাকে শরীর; পূরণ হয় ভিটামিন ‘ডি’র ঘাটতি। যারা আর্থ্রাইটিসের সমস্যায় ভুগছেন, তারা অবশ্যই প্রতিদিন রোদ পোহাবেন। এতে হাড়ের ব্যথা কমে, ঘুম ভালো হয়, ওজন কমাতে সাহায্য করে, জন্ডিস দূরে রাখে ইত্যাদি। সকাল ৮টার পর দুপুরের সময় পর্যন্ত প্রতিদিন কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫ মিনিট রোদে থাকলে উপকার মেলে। আবার অতিরিক্ত সময় রোদে থাকলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়—এই বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে।
৫. ঘরে আলো-বাতাস প্রবেশ করানঃ
অনেকে শীতকালে ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ রাখেন। এটি স্বাস্থ্যসম্মত নয়। ঠাণ্ডা থেকে বাঁচতে রাতে দরজা-জানালা বন্ধ রাখুন। কিন্তু দিনের বেলায় ঘরে পর্যাপ্ত আলো প্রবেশ করান, পর্দাগুলো খুলে দিন। এতে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ থেকে বাঁচা যাবে।
৬. মাস্ক পরুনঃ
শীতকালে বাতাসে প্রচুর ধূলিকণা থাকে। এগুলো নিঃশ্বাসের সঙ্গে দেহের ভেতরে যায়। এ জন্য ঘরের বাইরে বের হলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করুন। যারা অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্টে ভুগছেন, তারা অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করবেন।
৭. ঘাম ঝরানঃ
শীতে সহনীয় ব্যায়ামগুলো করুন। সম্ভব হলে কিছুটা ঘাম ঝরান। এতে শরীরে ব্যবহৃত শক্তির পরিমাণ নির্দেশক বেসাল মেটাবলিক রেট (বিএমআর) বাড়ে। ফলে রক্ত সঞ্চালন সহজ হয়। ব্যাডমিন্টন, বাস্কেটবল বা ভলিবলজাতীয় খেলাধুলা শীতের সময় বেশ ভালো জমে। এতে শারীরিক নানা উপকারও মেলে।
৮. প্রচুর পানি পান করুনঃ
শীতে অনেকের পানি পানের পরিমাণ কমে যায়। কম পানি পানের ফলে শরীর আরো শুষ্ক-রুক্ষ হয়। এ ছাড়া দুর্বলতা, মাথা ঘোরা, বমিভাব, ব্রণ, জ্বালাপোড়া, ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন, কোষ্ঠকাঠিন্য, ত্বকে ক্ষতিকর প্রভাব পড়াসহ নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। অন্যদিকে শীতের সময় বেশি পানি পান করলে দেহ থাকে তরতাজা ও প্রাণবন্ত। এ জন্য প্রতিদিন তিন থেকে সাড়ে তিন লিটার পানি পান করুন। সমস্যা মনে হলে প্রয়োজনে হালকা গরম করে নিন।
৯. ফলমূল ও শাক-সবজিঃ
এখন বাজারে প্রচুর ফলমূল ও মৌসুমি শাক-সবজির সমাহার। ভিটামিন ‘সি’ ও জিংক সমৃদ্ধ ফলমূল এই সময় বেশি খান। ভিটামিন ‘সি’ জাতীয় খাবার যেমন -কমলা, মালটা, আঙুর, পেঁপে, আনারস, জাম সর্দি কাশি দূর করে। আর সবজিতে আছে বায়োটিন, যা ত্বক ও চুল ভালো রাখে। এ ছাড়া প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে তাজা শাক-সবজি খান, বিশেষ করে ফুলকপি, আপেল, মটরশুঁটি, শিম, গাজর ইত্যাদি।
১০. ওজন কমানঃ
অনেকেই শীতকালে কম চলাফেরা ও হাঁটাহাঁটি করেন। ওজন কমানোর জন্য কিছু বিষয় মেনে চলা জরুরি। ওজন বাড়ানো যতটা সহজ, কমানোও কিন্তু তেমন সহজ। ওজন নিয়ে আজকাল সবাই একটু বেশি সচেতন। শরীরচর্চা, কার্ব কম খাওয়া, তেল–চর্বি এড়িয়ে চলার মতো নানা বিষয়ে সচেতনতা বেড়েছে সব বয়সী মানুষের মধ্যে। তবে এখানে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখা সবচেয়ে জরুরি। কারণ, ওজন কমাতে গেলে আপনার প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে একটা বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে। এর পাশাপাশি আপনাকে নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। কিছু পরামর্শ মেনে চললে ওজন বেশ খানিকটা কমতে বাধ্য। তবে এ কথাও ঠিক, যদি একজন পুষ্টিবিদের সঙ্গে কথা বলে সেই পরামর্শ মেনে চলেন, তাহলে আরও সুবিধা হবে।
অনলাইন থেকে সংগৃহীত।