আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির জীবন: ইরানের এক শক্তিশালী নেতার দীর্ঘ পথচলা
The Life of Ayatollah Ali Khamenei, A Long Journey of a Powerful Iranian Leader
ভূমিকা
আধুনিক ইরানের রাজনীতি ও ধর্মীয় নেতৃত্বে সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের মধ্যে অন্যতম হলেন আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। ১৯৮৯ সাল থেকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা (Supreme Leader) হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসা এই ব্যক্তিত্ব রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, ধর্মীয় কৌশল ও প্রতিরোধী অবস্থানের জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত।
জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন
- পূর্ণ নাম: সাইয়্যেদ আলি হোসেইনি খামেনি (Sayyid Ali Hosseini Khamenei)
- জন্ম: ১৭ জুলাই ১৯৩৯, মাশহাদ, ইরান
- পিতা: আয়াতুল্লাহ জাওয়াদ খামেনি – একজন ধর্মীয় পণ্ডিত
- শিক্ষা:
তিনি মাশহাদ, কোম ও নাজাফের ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ইসলামি জ্ঞান, ফিকহ (ইসলামি আইন), তাফসির ও দর্শনে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেন।
রাজনীতি ও বিপ্লবের সঙ্গে সম্পৃক্ততা
আয়াতুল্লাহ খামেনির রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভির শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের মাধ্যমে।
- তিনি ইমাম খোমেনির ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন।
- শাহবিরোধী কর্মকাণ্ডের কারণে বারবার গ্রেপ্তার ও নির্বাসনে পাঠানো হয়।
- ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের মাধ্যমে যখন ইরান একটি ইসলামি প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়, তখন তিনি নতুন গঠিত ইসলামী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে ওঠেন।
শাসনামল ও নেতৃত্ব
- প্রেসিডেন্ট হিসেবে: ১৯৮১ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত ইরানের রাষ্ট্রপতি ছিলেন।
- ১৯৮৯ সালে আয়াতুল্লাহ খোমেনির মৃত্যুর পর, তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা (Supreme Leader) হিসেবে নিযুক্ত হন।
- তিনি দেশের সশস্ত্র বাহিনী, বিচার বিভাগ, রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার ও গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত নীতিমালা নির্ধারণে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রদানকারী ব্যক্তি।
মতাদর্শ ও নীতিমালা
খামেনির নেতৃত্বে ইরান একদিকে যেমন পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে থাকে, অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যে হিজবুল্লাহ, সিরিয়া, ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের মতো গোষ্ঠীগুলোর প্রতি সমর্থনও প্রকাশ করে।
তার শাসনামলের বৈশিষ্ট্য:
- “মুকাবামার (প্রতিরোধের) ধারা” বজায় রাখা
- ইসলামি মূল্যবোধ ও শিয়া মতাদর্শের প্রতিপালন
- পারমাণবিক কর্মসূচির পক্ষে অবস্থান
- পশ্চিমা সংস্কৃতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান
সাহিত্য ও ধর্মীয় অবদান
খামেনি একজন দক্ষ লেখক ও অনুবাদকও। তিনি ইসলামি দর্শন, ইতিহাস এবং সাহিত্য নিয়ে কাজ করেছেন।
- তিনি কুরআনের ব্যাখ্যা এবং ইসলামি চিন্তাধারায় বহু বক্তৃতা প্রদান করেছেন।
- বিভিন্ন বই, ফাতওয়া ও ধর্মীয় রচনার মাধ্যমে ইসলামি ভাবধারা প্রচারে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন।
সমালোচনা ও বিতর্ক
যদিও খামেনিকে বহু ইরানি তার “আধ্যাত্মিক নেতা” হিসেবে সম্মান করেন, তবুও তার শাসনামল বিতর্কবিহীন নয়।
- মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ
- বিক্ষোভ দমন ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ
- নারী অধিকারের প্রশ্নে রক্ষণশীলতা
উপসংহার
আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি শুধু একজন ধর্মীয় নেতা নন, বরং তিনি আধুনিক ইরানের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক চালিকাশক্তির প্রতীক। তার জীবন, আদর্শ এবং নেতৃত্ব ইরানের ভেতর ও বাইরের রাজনীতিতে বিশাল প্রভাব ফেলেছে।
More info ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির (Ayatollah Ali Khamenei) জীবনের ওপর একটি বিস্তারিত
আয়াতুল্লাহ আলি হোসেইনি খামেনি (Ayatollah Ali Hosseini Khamenei) ১৯৩৯ সালের ১৯ এপ্রিল ইরানের মাশহাদে একটি ধর্মীয় পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বর্তমান ইরানের দ্বিতীয় এবং দীর্ঘমেয়াদী সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা। তার জীবন ইরানের ইসলামি বিপ্লবের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত এবং তিনি দেশটির ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ইতিহাসে এক প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব।1
প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা:
খামেনির বাবা ছিলেন একজন সাধারণ কিন্তু শ্রদ্ধেয় ধর্মীয় আলেম। দারিদ্র্যের মধ্যে তার শৈশব কেটেছে। মাত্র চার বছর বয়সে তিনি তার বড় ভাই সাইয়্যেদ মুহাম্মদের সাথে মাকতাব (ঐতিহ্যবাহী প্রাথমিক বিদ্যালয়) এ কুরআন শিক্ষা শুরু করেন। এরপর তিনি মাশহাদের ধর্মীয় মাদ্রাসায় প্রাথমিক ও উচ্চতর স্তরের পড়াশোনা করেন। তার শিক্ষকদের মধ্যে শেখ হাশেম কাজভিনি এবং আয়াতুল্লাহ মিলানি অন্যতম। ১৯৫৭ সালে তিনি উচ্চতর ধর্মীয় শিক্ষার জন্য নাজাফ (ইরাক) যান, কিন্তু বাবার অসুস্থতার কারণে দ্রুত ইরানে ফিরে আসেন। ১৯৫৮ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত তিনি কোমের ইসলামি মাদ্রাসায় উচ্চতর পড়াশোনা চালিয়ে যান, যেখানে তিনি আয়াতুল্লাহ হোসেইন বোরুজর্দি, ইমাম খোমেনি, শেখ মুর্তাজা হায়েরী ইয়াজদি এবং আল্লামা তাবাতাবাই-এর মতো প্রখ্যাত আলেমদের সান্নিধ্যে আসেন। বিশেষত ইমাম খোমেনি তার ওপর গভীর প্রভাব ফেলেন।
বিপ্লবী কর্মকাণ্ড ও শাহের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ:
১৯৬০-এর দশকে শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভীর ধর্মনিরপেক্ষ আধুনিকীকরণ নীতির বিরুদ্ধে খামেনি সক্রিয়ভাবে আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন।2 তিনি শাহের সরকারের বিরুদ্ধে রুহুল্লাহ খোমেনির বিপ্লবী আন্দোলনের একজন ঘনিষ্ঠ সহযোদ্ধা হয়ে ওঠেন। তার বিপ্লবী কার্যকলাপের কারণে তিনি বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার হন এবং সাভাক (শাহের গোপন পুলিশ) দ্বারা তাকে নির্যাতন করা হয়। ১৯৬৪ থেকে ১৯৭৮ সালের মধ্যে তিনি ছয়বার কারাবরণ করেন এবং দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে নির্বাসিত জীবন যাপন করেন। ১৯৭৭ সালে তাকে ইরানেشهر শহরে তিন বছরের জন্য নির্বাসিত করা হয়েছিল, তবে ১৯৭৮ সালের বিপ্লব শুরু হওয়ায় তিনি প্রত্যাশিত সময়ের আগেই তেহরানে ফিরে আসেন।
ইসলামি বিপ্লব ও ক্ষমতা আরোহণ:
১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবে খামেনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। বিপ্লবের পর নবগঠিত ইসলামি প্রজাতন্ত্রে তিনি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বিপ্লবী সুরক্ষা পরিষদের সদস্য এবং বিপ্লবী অভ্যন্তরীণ রক্ষাকারী বাহিনীর সহ-পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি তেহরানের জুমা নামাজের ইমাম হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন, যা তাকে জনগণের মধ্যে পরিচিত করে তোলে। ১৯৮১ সালে তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়, এতে তার ডান হাত পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
১৯৮১ সালে তিনি ইরানের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন এবং ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদে এই পদে অধিষ্ঠিত থাকেন। তার রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন সময়ে তিনি ইরাক-ইরান যুদ্ধের সময় দেশকে নেতৃত্ব দেন। এই সময়ে তিনি ইসলামি বিপ্লবী গার্ড কর্পস (IRGC)-এর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন।
সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ:
১৯৮৯ সালে আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনির মৃত্যুর পর, বিশেষজ্ঞদের পরিষদ (Assembly of Experts) আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা (Supreme Leader) হিসেবে নির্বাচিত করে। যদিও তখন তিনি মারজা (শিয়া ইসলামে উচ্চ পদস্থ ধর্মীয় নেতা) ছিলেন না, যা কিছু বিতর্কের জন্ম দেয়, তবুও তার দীর্ঘদিনের বিপ্লবী অভিজ্ঞতা এবং ইমাম খোমেনির প্রতি তার আনুগত্য তাকে এই গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়ে আসে। সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে তিনি দেশের সামরিক বাহিনী, বিচার বিভাগ, জাতীয় রেডিও ও টেলিভিশন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা সংস্থার প্রধানদের নিয়োগ করেন।3 তার এই পদে আসীন হওয়ার পর থেকে তিনি ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ইরানের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ভাগ্যকে দৃঢ়ভাবে নির্ধারণ করে চলেছেন।
নীতি ও প্রভাব:
খামেনি তার শাসনামলে ইরানের অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছেন এবং ১৯৯০-এর দশকে দেশীয় অস্থিরতা স্থিতিশীল করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেন। তার নেতৃত্বে ইরান একটি আঞ্চলিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। তিনি পশ্চিমা উদার গণতান্ত্রিক এবং পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে ত্রুটিপূর্ণ বলে মনে করেন এবং পশ্চিমা সংস্কৃতিতে ভোগবাদ ও ইসলামোফোবিয়ার সমালোচনা করেন। তবে তিনি সম্পূর্ণভাবে পশ্চিমা-বিরোধী নন, বরং তাদের সংস্কৃতিতে ভালো-মন্দ উভয় দিকই রয়েছে বলে মনে করেন।
আয়াতুল্লাহ খামেনি পারমাণবিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করে বলেছেন যে, পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি ও ব্যবহার করা ইসলাম অনুযায়ী নিষিদ্ধ। তিনি ইরানের বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির অন্যতম সহায়ক ও সমর্থক। তিনি প্রথম ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে একজন যিনি বিভিন্ন জৈবিক গবেষণা অনুমোদন ও সমর্থন করেন।
ব্যক্তিগত জীবন:
ব্যক্তিগত জীবনে আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি ১৯৫৪ সালে মানসুরাহ খোজাস্তেহ বাঘেরজাদেহকে বিয়ে করেন। তারা ছয় সন্তানের জনক। তিনি তার সাধারণ এবং ধার্মিক জীবনযাপনের জন্য পরিচিত।
আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি একজন “লৌহমানব” হিসেবে পরিচিত এবং মুসলিম বিশ্বে সাহসের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল এবং অন্যান্য পশ্চিমা শক্তির সঙ্গে কয়েক দশক ধরে লড়াই করে টিকে আছেন এবং মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। তার নেতৃত্বে ইরান বিশ্ব মঞ্চে তার নিজস্ব স্থান তৈরি করেছে এবং আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে।
SSC/HSC / ষষ্ঠ থেকে নবম/দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা নতুন নতুন সাজেশান্স ও নোট পেতে আমাদের Website Eduexplain / Facebook এ Like/Follow দিয়ে রাখো। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি Subscribe করতে পারো এই লিংক থেকে ।
সকল শ্রেণির শিক্ষার্থীরা, Eduexplain বহুনির্বাচনি নিয়ে Live MCQ আয়োজন করতে যাচ্ছে। আপনাদের পরীক্ষা প্রস্তুতিকে আরো জোরদার করবে MCQ টেস্ট । এখন থেকে নিয়মিত Live MCQ আয়োজন করা হবে।ইনশাআল্লাহ।
নির্ভুল ও সকল শিট Word file / pdf পেতে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে ইনবক্স করুন WhatsApp নাম্বারে ০১৭৭৩৫৮৬১৭৬ । ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের Website www.eduexplain.com ও You Tube Channel Subscribe করতে পারো এই লিংক থেকে
🔷 SEO ট্যাগের জন্য কিওয়ার্ড (উল্লেখযোগ্য):
আয়াতুল্লাহ খামেনি, Ali Khamenei Biography in Bengali, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা, ইসলামি প্রজাতন্ত্র, ইরানের রাজনীতি, খামেনির শাসন, আধুনিক ইরান, Supreme Leader of Iran, খামেনির ধর্মীয় মতাদর্শ
আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির জীবন: ইরানের এক শক্তিশালী নেতার দীর্ঘ পথচলা
ভূমিকা
আধুনিক ইরানের রাজনীতি ও ধর্মীয় নেতৃত্বে সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের মধ্যে অন্যতম হলেন আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। ১৯৮৯ সাল থেকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা (Supreme Leader) হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসা এই ব্যক্তিত্ব রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, ধর্মীয় কৌশল ও প্রতিরোধী অবস্থানের জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত।
জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন
- পূর্ণ নাম: সাইয়্যেদ আলি হোসেইনি খামেনি (Sayyid Ali Hosseini Khamenei)
- জন্ম: ১৭ জুলাই ১৯৩৯, মাশহাদ, ইরান
- পিতা: আয়াতুল্লাহ জাওয়াদ খামেনি – একজন ধর্মীয় পণ্ডিত
- শিক্ষা:
তিনি মাশহাদ, কোম ও নাজাফের ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ইসলামি জ্ঞান, ফিকহ (ইসলামি আইন), তাফসির ও দর্শনে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেন।
রাজনীতি ও বিপ্লবের সঙ্গে সম্পৃক্ততা
আয়াতুল্লাহ খামেনির রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভির শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের মাধ্যমে।
- তিনি ইমাম খোমেনির ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন।
- শাহবিরোধী কর্মকাণ্ডের কারণে বারবার গ্রেপ্তার ও নির্বাসনে পাঠানো হয়।
- ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের মাধ্যমে যখন ইরান একটি ইসলামি প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়, তখন তিনি নতুন গঠিত ইসলামী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে ওঠেন।
শাসনামল ও নেতৃত্ব
- প্রেসিডেন্ট হিসেবে: ১৯৮১ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত ইরানের রাষ্ট্রপতি ছিলেন।
- ১৯৮৯ সালে আয়াতুল্লাহ খোমেনির মৃত্যুর পর, তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা (Supreme Leader) হিসেবে নিযুক্ত হন।
- তিনি দেশের সশস্ত্র বাহিনী, বিচার বিভাগ, রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার ও গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত নীতিমালা নির্ধারণে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রদানকারী ব্যক্তি।
মতাদর্শ ও নীতিমালা
খামেনির নেতৃত্বে ইরান একদিকে যেমন পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে থাকে, অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যে হিজবুল্লাহ, সিরিয়া, ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের মতো গোষ্ঠীগুলোর প্রতি সমর্থনও প্রকাশ করে।
তার শাসনামলের বৈশিষ্ট্য:
- “মুকাবামার (প্রতিরোধের) ধারা” বজায় রাখা
- ইসলামি মূল্যবোধ ও শিয়া মতাদর্শের প্রতিপালন
- পারমাণবিক কর্মসূচির পক্ষে অবস্থান
- পশ্চিমা সংস্কৃতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান
সাহিত্য ও ধর্মীয় অবদান
খামেনি একজন দক্ষ লেখক ও অনুবাদকও। তিনি ইসলামি দর্শন, ইতিহাস এবং সাহিত্য নিয়ে কাজ করেছেন।
- তিনি কুরআনের ব্যাখ্যা এবং ইসলামি চিন্তাধারায় বহু বক্তৃতা প্রদান করেছেন।
- বিভিন্ন বই, ফাতওয়া ও ধর্মীয় রচনার মাধ্যমে ইসলামি ভাবধারা প্রচারে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন।
সমালোচনা ও বিতর্ক
যদিও খামেনিকে বহু ইরানি তার “আধ্যাত্মিক নেতা” হিসেবে সম্মান করেন, তবুও তার শাসনামল বিতর্কবিহীন নয়।
- মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ
- বিক্ষোভ দমন ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ
- নারী অধিকারের প্রশ্নে রক্ষণশীলতা
উপসংহার
আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি শুধু একজন ধর্মীয় নেতা নন, বরং তিনি আধুনিক ইরানের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক চালিকাশক্তির প্রতীক। তার জীবন, আদর্শ এবং নেতৃত্ব ইরানের ভেতর ও বাইরের রাজনীতিতে বিশাল প্রভাব ফেলেছে।
More info ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির (Ayatollah Ali Khamenei) জীবনের ওপর একটি বিস্তারিত
আয়াতুল্লাহ আলি হোসেইনি খামেনি (Ayatollah Ali Hosseini Khamenei) ১৯৩৯ সালের ১৯ এপ্রিল ইরানের মাশহাদে একটি ধর্মীয় পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বর্তমান ইরানের দ্বিতীয় এবং দীর্ঘমেয়াদী সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা। তার জীবন ইরানের ইসলামি বিপ্লবের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত এবং তিনি দেশটির ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ইতিহাসে এক প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব।1
প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা:
খামেনির বাবা ছিলেন একজন সাধারণ কিন্তু শ্রদ্ধেয় ধর্মীয় আলেম। দারিদ্র্যের মধ্যে তার শৈশব কেটেছে। মাত্র চার বছর বয়সে তিনি তার বড় ভাই সাইয়্যেদ মুহাম্মদের সাথে মাকতাব (ঐতিহ্যবাহী প্রাথমিক বিদ্যালয়) এ কুরআন শিক্ষা শুরু করেন। এরপর তিনি মাশহাদের ধর্মীয় মাদ্রাসায় প্রাথমিক ও উচ্চতর স্তরের পড়াশোনা করেন। তার শিক্ষকদের মধ্যে শেখ হাশেম কাজভিনি এবং আয়াতুল্লাহ মিলানি অন্যতম। ১৯৫৭ সালে তিনি উচ্চতর ধর্মীয় শিক্ষার জন্য নাজাফ (ইরাক) যান, কিন্তু বাবার অসুস্থতার কারণে দ্রুত ইরানে ফিরে আসেন। ১৯৫৮ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত তিনি কোমের ইসলামি মাদ্রাসায় উচ্চতর পড়াশোনা চালিয়ে যান, যেখানে তিনি আয়াতুল্লাহ হোসেইন বোরুজর্দি, ইমাম খোমেনি, শেখ মুর্তাজা হায়েরী ইয়াজদি এবং আল্লামা তাবাতাবাই-এর মতো প্রখ্যাত আলেমদের সান্নিধ্যে আসেন। বিশেষত ইমাম খোমেনি তার ওপর গভীর প্রভাব ফেলেন।
বিপ্লবী কর্মকাণ্ড ও শাহের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ:
১৯৬০-এর দশকে শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভীর ধর্মনিরপেক্ষ আধুনিকীকরণ নীতির বিরুদ্ধে খামেনি সক্রিয়ভাবে আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন।2 তিনি শাহের সরকারের বিরুদ্ধে রুহুল্লাহ খোমেনির বিপ্লবী আন্দোলনের একজন ঘনিষ্ঠ সহযোদ্ধা হয়ে ওঠেন। তার বিপ্লবী কার্যকলাপের কারণে তিনি বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার হন এবং সাভাক (শাহের গোপন পুলিশ) দ্বারা তাকে নির্যাতন করা হয়। ১৯৬৪ থেকে ১৯৭৮ সালের মধ্যে তিনি ছয়বার কারাবরণ করেন এবং দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে নির্বাসিত জীবন যাপন করেন। ১৯৭৭ সালে তাকে ইরানেشهر শহরে তিন বছরের জন্য নির্বাসিত করা হয়েছিল, তবে ১৯৭৮ সালের বিপ্লব শুরু হওয়ায় তিনি প্রত্যাশিত সময়ের আগেই তেহরানে ফিরে আসেন।
ইসলামি বিপ্লব ও ক্ষমতা আরোহণ:
১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবে খামেনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। বিপ্লবের পর নবগঠিত ইসলামি প্রজাতন্ত্রে তিনি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বিপ্লবী সুরক্ষা পরিষদের সদস্য এবং বিপ্লবী অভ্যন্তরীণ রক্ষাকারী বাহিনীর সহ-পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি তেহরানের জুমা নামাজের ইমাম হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন, যা তাকে জনগণের মধ্যে পরিচিত করে তোলে। ১৯৮১ সালে তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়, এতে তার ডান হাত পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
১৯৮১ সালে তিনি ইরানের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন এবং ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদে এই পদে অধিষ্ঠিত থাকেন। তার রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন সময়ে তিনি ইরাক-ইরান যুদ্ধের সময় দেশকে নেতৃত্ব দেন। এই সময়ে তিনি ইসলামি বিপ্লবী গার্ড কর্পস (IRGC)-এর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন।
সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ:
১৯৮৯ সালে আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনির মৃত্যুর পর, বিশেষজ্ঞদের পরিষদ (Assembly of Experts) আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা (Supreme Leader) হিসেবে নির্বাচিত করে। যদিও তখন তিনি মারজা (শিয়া ইসলামে উচ্চ পদস্থ ধর্মীয় নেতা) ছিলেন না, যা কিছু বিতর্কের জন্ম দেয়, তবুও তার দীর্ঘদিনের বিপ্লবী অভিজ্ঞতা এবং ইমাম খোমেনির প্রতি তার আনুগত্য তাকে এই গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়ে আসে। সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে তিনি দেশের সামরিক বাহিনী, বিচার বিভাগ, জাতীয় রেডিও ও টেলিভিশন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা সংস্থার প্রধানদের নিয়োগ করেন।3 তার এই পদে আসীন হওয়ার পর থেকে তিনি ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ইরানের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ভাগ্যকে দৃঢ়ভাবে নির্ধারণ করে চলেছেন।
নীতি ও প্রভাব:
খামেনি তার শাসনামলে ইরানের অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছেন এবং ১৯৯০-এর দশকে দেশীয় অস্থিরতা স্থিতিশীল করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেন। তার নেতৃত্বে ইরান একটি আঞ্চলিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। তিনি পশ্চিমা উদার গণতান্ত্রিক এবং পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে ত্রুটিপূর্ণ বলে মনে করেন এবং পশ্চিমা সংস্কৃতিতে ভোগবাদ ও ইসলামোফোবিয়ার সমালোচনা করেন। তবে তিনি সম্পূর্ণভাবে পশ্চিমা-বিরোধী নন, বরং তাদের সংস্কৃতিতে ভালো-মন্দ উভয় দিকই রয়েছে বলে মনে করেন।
আয়াতুল্লাহ খামেনি পারমাণবিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করে বলেছেন যে, পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি ও ব্যবহার করা ইসলাম অনুযায়ী নিষিদ্ধ। তিনি ইরানের বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির অন্যতম সহায়ক ও সমর্থক। তিনি প্রথম ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে একজন যিনি বিভিন্ন জৈবিক গবেষণা অনুমোদন ও সমর্থন করেন।
ব্যক্তিগত জীবন:
ব্যক্তিগত জীবনে আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি ১৯৫৪ সালে মানসুরাহ খোজাস্তেহ বাঘেরজাদেহকে বিয়ে করেন। তারা ছয় সন্তানের জনক। তিনি তার সাধারণ এবং ধার্মিক জীবনযাপনের জন্য পরিচিত।
আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি একজন “লৌহমানব” হিসেবে পরিচিত এবং মুসলিম বিশ্বে সাহসের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল এবং অন্যান্য পশ্চিমা শক্তির সঙ্গে কয়েক দশক ধরে লড়াই করে টিকে আছেন এবং মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। তার নেতৃত্বে ইরান বিশ্ব মঞ্চে তার নিজস্ব স্থান তৈরি করেছে এবং আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে।
SSC/HSC / ষষ্ঠ থেকে নবম/দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা নতুন নতুন সাজেশান্স ও নোট পেতে আমাদের Website Eduexplain / Facebook এ Like/Follow দিয়ে রাখো। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি Subscribe করতে পারো এই লিংক থেকে ।
সকল শ্রেণির শিক্ষার্থীরা, Eduexplain বহুনির্বাচনি নিয়ে Live MCQ আয়োজন করতে যাচ্ছে। আপনাদের পরীক্ষা প্রস্তুতিকে আরো জোরদার করবে MCQ টেস্ট । এখন থেকে নিয়মিত Live MCQ আয়োজন করা হবে।ইনশাআল্লাহ।
নির্ভুল ও সকল শিট Word file / pdf পেতে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে ইনবক্স করুন WhatsApp নাম্বারে ০১৭৭৩৫৮৬১৭৬ । ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের Website www.eduexplain.com ও You Tube Channel Subscribe করতে পারো এই লিংক থেকে
🔷 SEO ট্যাগের জন্য কিওয়ার্ড (উল্লেখযোগ্য):
আয়াতুল্লাহ খামেনি, Ali Khamenei Biography in Bengali, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা, ইসলামি প্রজাতন্ত্র, ইরানের রাজনীতি, খামেনির শাসন, আধুনিক ইরান, Supreme Leader of Iran, খামেনির ধর্মীয় মতাদর্শ